আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল হবে না। এটা আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা আইনের মধ্যেই সাংবাদিকদের, যারা সত্য সাংবাদিকতা করেন, তাদের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই প্রভিশন থাকবে।
বুধবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘শেপিং আ ফিউচার অব রাইটস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনাগুলো বিবেচনা করা হবে: আইনমন্ত্রী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে সরকার কাজ করছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি, এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, শুধমাত্র সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য।
আমি আপনাদের নিশ্চিত করেই বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কখনও সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতা হরণ করবে না। কারণ, বঙ্গবন্ধু তার দেওয়া সংবিধানে সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দানসহ একে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তিনি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে দিয়েছেন; ৪০টির অধিক টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও এবং ১৭টি কমিউনিটি রেডিও অনুমোদন দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান উপহার দেন, তার ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হয়। শুধু তাই নয়, বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়-এটাই হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির অঙ্গীকার এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি আওয়ামী লীগের উদার গণতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর, তার দেওয়া সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে যেসব মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো নির্বিচারে লঙ্ঘন করা হয়।
সামরিক স্বৈর শাসকরা সংবাদ মাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতার সবকিছুই লঙ্ঘন করে এবং বাধাগ্রস্ত করে। বলতে গেলে সেসময় বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কিছুই ছিল না।
এটা নিয়ন্ত্রিত হতো একটি বিশেষ জায়গা থেকে।
তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দেন। এসব টেলিভিশন চালু হওয়ার পর সেগুলোতে প্রচলিত অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পাশাপাশি নতুন ধারার অনুষ্ঠান টকশো ও লাইভ নিউজ সম্প্রচার শুরু হয় এবং এর মাধ্যমে দেশে সংবাদ মাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতার নব দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
তিনি ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অভিযাত্রা শুরু করেন, তার ফলে আজ বাংলাদেশে অনলাইন মিডিয়া ও স্যোসাল মিডিয়ার বিপ্লব ঘটেছে।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র পাওয়ার অধিকারের ওপর জোর দিলেন আইনমন্ত্রী
জননেত্রী শেখ হাসিনার গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে দেশে প্রায় কয়েক হাজার অনলাইন মিডিয়া ও নিউজ পোর্টাল কাজ করছে।
এর পাশাপাশি ফেইসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন স্যোসাল মিডিয়া রয়েছে। এসব নিউ মিডিয়ায় দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রতি মুহুর্তে অবাধে অডিও-ভিজুয়াল সংবাদ ও মতামত প্রকাশ করছে।
ফলে নিউ মিডিয়া এখন অনেক ক্ষেত্রেই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদের সোর্স হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের গুরুত্ব তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোকে সর্বক্ষণ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করে টিকে থাকতে হয়।
সে কারণে তাদেরকে সবসময় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু অনলাইন মিডিয়া ও স্যোসাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে এই দায়িত্বশীলতার বড়ই অভাব দেখা যায়। যেকারণে হর-হামেশাই এসব নিউ মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
এসব সাইবার অপরাধ দমনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
সাইবার অপরাধ দমনের জন্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম. ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে আইন প্রণয়নের উদাহরণ টেনে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারও ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে।
আইনটি প্রণয়নের পূর্বে এডিটরস কাউন্সিল, এটকো, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়।
এমনকি এই আলোচনার দ্বার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আইনটি বাস্তবায়নের প্রথম দিকে, এর কিছু মিসইউজ ও অ্যাবিউজ হয়েছে- এটি আমি অস্বীকার করবো না।
তবে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সেই মিসইউজ ও অ্যাবিউজ আগের তুলনায় অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
আমরা এসব মিসইউজ ও অ্যাবিউজ আরও কমানোর লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-কে পরিশুদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি।
আরও পড়ুন: কোনো মতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা যায় না: আইনমন্ত্রী