নীলফামারীর ডিমলায় উৎপাত বেড়েছে জমির ভুয়া দলিল তৈরি চক্রের। এসব ভুয়া দলিল চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।
সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার বাবুরহাট বাজারের প্রধান সড়কে ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে চক্রটির হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ, মহুবার হোসেন, মশিয়ার রহমান, ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান, মনছুর আলী প্রমুখ।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে পোশাক শ্রমিকদের মানববন্ধন
তারা বলেন,‘জাল দলিল চক্রের মূলহোতারা (মাজেদুল-রনজিৎ- হাফিজুল- ময়েন গং) ভুয়া দলিল তৈরি করে এলাকার নিরীহ মানুষের জমি দখলে নিয়ে ভোগদখল ও বিক্রি করছেন। প্রতিবাদ করলে উল্টো মারধর করে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে নানা প্রকার হয়রানি করে।’ তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সহায়তা চান তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ বলেন, ভূমিদস্যুরা ভুয়া দলিল, ভূমি রেকর্ড ও পর্চা তৈরি করে নিরীহ মানুষের শত শত বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে চলেছে। টাকার বিনিময়ে জাল দলিল বানিয়ে অন্যকেও জমি দখল করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এমন জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি প্রকৃত ভূমি মালিকদের একের পর এক বিপদে ফেলে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না পেলে মিথ্যা মামমলাসহ প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’
ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ক্রয়কৃত সাত একর জমির ভুয়া দলিল করে জোরপূর্বক পাঁচ বছর ধরে দখল করে খাচ্ছে ভূমিদস্যুরা ।আমার মতো অনেকের জমি-জমা এভাবে জোর করে খাচ্ছে তারা।’
মহুবার হোসেন বলেন, ভূমির জাল কাগজপত্র, স্ট্যাম্প, সিলমোহর আছে তাদের কাছে। এমনকি জাল স্ট্যাম্প, ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামে নকল করা সিল ও জাল স্বাক্ষরের ব্যবস্থাও আছে। ভারত,পাকিস্তানসহ পুরোনো দিনের বিভিন্ন স্ট্যাম্পও আছে তাদের হাতে। এসব ব্যবহার করে দিনের পর দিন নিরীহ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে তারা।’
সমাবেশে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপজেলার তিপাড়া গ্রামের এক বৃদ্ধ মনছুর আলী। এসময় তিনি বলেন,‘আমার নয় শতক জমির ভুয়া দলিল তৈরি করে দখল করে নিয়েছে ওই জালিয়াত চক্র। শেষ বয়সে তাদের সঙ্গে লড়াই করে কুলাতে পারছি না।’
মানববন্ধন শেষে ওই জালিয়াত চক্রের সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন,‘ইদানিং ডিমলা উপজেলায় এরকম একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে মানুষের ক্রয়কৃত সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল প্রদর্শন করে ওই জমি নিজের বলে দাবি করছেন। ওই দলিল দিয়ে তারা বিভিন্নভাবে মামলা মোকদ্দমা করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছেন। আজকে আমি বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী মানুষের কাছে অভিযোগ পেয়েছি। তারা বিভিন্ন নাম উল্লেখ করেই অভিযোগ করছেন।
ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিমলা থানা পুলিশ। বাকিদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আশাকরি শিগগিরই তারা গ্রেপ্তার হবেন। পুরো সিন্ডিকেট নিয়ে তদন্ত চলমান আছে, চক্রটিকে যেন আমরা ডিমলা থেকে উৎখাত করতে পারি এজন্য আমরা সর্বদা সচেষ্ট আছি।
ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান বলেন,‘ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে জাল-জালিয়াতের এ চক্রটির দুই সদস্যকে গত ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে সাত দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন!
রাণীশংকৈলে শিক্ষক হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন