স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, দেশে এই বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছয় হাজার ৪৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বমোট ২৬টি মৃত্যুর সংখ্যা আমরা রেকর্ড করেছি। আমরা যদি রোগীর সংখ্যার দিকে তাকাই তাহলে এই ছয় হাজার ৪৫০ জন রোগীর বিপরীতে এতো মানুষের মৃত্যু, এটি অত্যন্ত শঙ্কার কারণ।
বুধবার দেশের সার্বিক করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এই আশঙ্কার কথা জানান অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু: সর্বোচ্চ আক্রান্ত ৩২৯
তিনি বলেন, বর্ষাকাল এলে আমরা দেখি যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রূপ নেয়। গত ২০১৯ সালে আমরা দেখেছি যে একটি ডেঙ্গু মহামারি আমাদেরকে কীভাবে আক্রান্ত করেছিল। ২০২১ সালে এসেও একই রকম একটি পরিস্থিতির মুখে আমরা দাঁড়িয়েছি। তবে আমরা মনে করি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সেটি মোকাবিলা করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোধে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যেভাবে করছেন, সে কাজের আরেকটু গতি বাড়িয়ে দিলে খুব সহজেই ডেঙ্গু মোকাবেলা করা সম্ভব। এছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাসগৃহে ফুলের টবসহ বাসার ভেতরে বাইরে জমে থাকা যেসব পানি আছে, সেগুলো অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। তিন দিনের বেশি সময় বাসার বাইরে যদি কেউ অবস্থান করে তাহলে বাথরুমের কমোড, প্যান ইত্যাদি ঢেকে রাখতে হবে। পানির পাত্র পরিষ্কার করে উল্টে রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তারা মাঠে থাকবে: মেয়র আতিক
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কারো শরীরে জ্বর আসলেই কেবল করোনা মনে করতে হবে তা নয়। এর পাশাপাশি কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের যে পরীক্ষাটি আছে, এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষাটি করতে হবে। এই পরীক্ষাটি সহজেই করা যায়। সরকারি-বেসরকারি সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা পয়সায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, এই পরীক্ষাগুলো করে ফেলতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত কমেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে নতুন রোগী কমেছে ৪২ শতাংশ। এদিকে রাজধানী ঢাকায় রোগী শনাক্তের হার কমেছে ১৮ শতাংশ। আর বরিশাল বিভাগে কমেছে ৩৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, গত সাত দিনে যদি আমরা সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখি, তাহলে ১১ আগস্ট যেখানে সংক্রমণের হার ছিল ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সেখানে শতকরা হিসেবে গতকাল পর্যন্ত আমরা দেখেছি ১৯ শতাংশের সামান্য একটু বেশি এসে ঠেকেছে। সামাগ্রিকভাবে গত ৩০ দিনের যে সংক্রমণ চিত্রটি ছিল, শেষের দিকে এসে আমরা দেখলাম খানিকটা সংক্রমণ কমেছে।
আরও পড়ুনঃ তিন দিনে এক দিন, জমা পানি ফেলে দিন: মেয়র আতিক
মাস ভিত্তিক যদি আমরা সংক্রমণের চিত্রটি দেখি, সবচেয়ে কম সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই মাসে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছিলাম এক হাজার ৭৭ জন রোগী। কিন্তু তার বিপরীতে জুলাই মাসে আমরা সবচেয়ে বেশি সংক্রমণটি দেখেছি। এই মাসে সারাদেশে তিন লাখ ৩৪ হাজার ২২৬ জন রোগী আমরা শনাক্ত করতে পেরেছিলাম। এবং আগস্ট মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত এক লাখ ৮২ হাজার ৯১২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রোগী বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি যদি সব জায়গায় সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হয়, তাহলে রোগীর সংখ্যা বাড়বে না। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করে যদি আমরা নিজেদের মতোই চলাচল করি, তাহলে রোগী বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
নিবন্ধন করে টিকা না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, টিকা পাওয়ার জন্য যারা আগে রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তারা আগেই টিকা পাবেন। সে অনুযায়ী এসএমএস দেওয়া হবে। যে পরিমাণ মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধিত হয়েছে, সে সংখ্যাটি অনেক বেশি। আবার মাঝখানে দীর্ঘদিন আমরা টিকা স্বল্পতার কারণে আমরা টিকা প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে পারিনি। সবমিলিয়ে আমাদের ওপর একটু চাপ আছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আশা করি আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে এটি কিভাবে বাড়ানো যায় চেষ্টা করব।