শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেছেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী চীনের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছে।’
বুধবার ‘দারিদ্র্য বিমোচন: বাংলাদেশ ও চীনের অভিজ্ঞতা’ – শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং চীন উভয়ই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং দারিদ্র্য বিমোচন উভয় রাজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কিভাবে অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে তা অন্যান্য দেশ বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শিখছে।’
ওয়েবিনারে বাংলাদেশকে দরিদ্র্যমুক্ত করতে এবং দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে তা পূরণে সরকারকে চীনের কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ সময় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যে দুই বছর মেয়াদী ২৫ সদস্যের অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-চায়না এলামনাই (অ্যাবকা)- এর কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।
চীনে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফায়েজ আহমদকে সভাপতি এবং সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মো. সাহাবুল হককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করে এই কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ওয়েবিনারে দীপু মনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও চীন অত্যন্ত জনবহুল দুটি দেশ। তাই দুই দেশের জন্যই দারিদ্র্য বিমোচন অত্যন্ত জরুরী এবং বেশ কঠিন।
বাংলাদেশ চীনের মধ্যে বিদ্যমান গভীর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘সাধারণত দুই দেশের কুটনৈতিক সম্পর্কের ৪৬তম বার্ষিকী নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বহুদিনের পুরোনো। দুই দেশের সম্পর্কের গোড়া অন্তত আরও দুই হাজার বছরের পুরোনো।’
তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে চীনের ব্যাপক সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেন, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি ও দেশের মানুষ আশা করেন।
বাংলাদেশকে দরিদ্রমুক্ত করতে এবং দেশে আরও ব্যাপক সংখ্যক সময়োপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষার বিস্তারের ওপর জোর দেয়ার জন্য ওয়েবিনারে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ’
আরও পড়ুন: চীনের উপহারের আরও ১০ লাখ টিকা দেশে পৌঁছেছে
দীপু মনি এ সময় অ্যাবকার নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই কমিটি বাংলাদেশ-চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদারের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে বলে তার বিশ্বাস।’
চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বাংলাদেশকে দরিদ্রমুক্ত করতে শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের এই অগ্রগতিতে বন্ধুপ্রতীম দেশ চীনেরও অনেক আন্তরিক সহযোগিতা ছিল বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন তাদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য চীনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি চীনে অধ্যয়ন করছে। চীনে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে দিশে ফিরে এখন বাংলাদেশের বহু ডাক্তার, শিক্ষক এবং ইঞ্জিনিয়ার দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করছেন।’
তিনি চীনের আদলে দেশ থেকে দরিদ্রতা দূর করতে সু-পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। প্রায় চার দশক আগে চীন এমনই পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রতিনিয়ত তা বাস্তবায়নে কাজ করার মধ্য দিয়ে দেশকে আজ দরিদ্রমুক্ত করতে পেরেছে বলেও দাবি করেন এই কুটনীতিক।
ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে পল্লী সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, ‘৭০-এর দশকে দারিদ্র্য সূচকে বাংলাদেশ ও চীন প্রায় একই অবস্থানে ছিল। অথচ সুপরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষ নেতৃত্বের বদৌলতে চীন দেশ থেকে দরিদ্রতা দূর করতে সক্ষম হয়। ’
তিনি বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই দুই দেশকে সবসময় একইভাবে বিবেচনা করা যায় না।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে: চীনা উপরাষ্ট্রদূত
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। মূল বক্তা হিসাবে আরও ছিলেন অধ্যাপক ড. লি শিয়াওইউন, প্রধান অধ্যাপক চায়না কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সন্মানিত ডিন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক কৃষি বিভাগ । আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনাব চুয়াং লিফং, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশে ওভারসিস চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এলডিসি গ্রুপ এবং ড. বিনায়েক সেন, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)।
অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফায়েজ আহমেদ। এছাড়াও বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সন্মানিত সভাপতি ছাই শি, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাইনুল ইসলাম সাধারণ এবং সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক, কার্যনির্বাহী সদস্যরা, উপদেষ্টা মণ্ডলী, সাধারণ সদস্যরা ও চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: চীনের উপহারের আরও ১০ লাখ টিকা দেশে পৌঁছেছে