ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সাথে বৈঠকে উভয়পক্ষই কোভিড-পরবর্তী যুগে ভ্যাকসিন ইস্যু, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পানিসম্পদ বণ্টন, নিরাপত্তা ইস্যু, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং জনগণের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করবেন।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার ইঙ্গিত দিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা টেবিলে থাকা সব এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করব।’
তিনি বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক সংবাদ শুনতে চায় এবং একই সাথে অন্যান্য সাধারণ নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্ব: পানিবণ্টন নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চায় দিল্লি
মোদিকে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ
বুধবার সন্ধ্যায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিকাব) সাথে বৈঠকের পর তিনি বলেন, ‘বল (তিস্তা বিষয়ে) এখন ভারতের কোর্টে । আমরা অবশ্যই দেখতে চাইব যে এটি সমাধান হয়ে গেছে। আমরা জানি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার এখনও তিস্তার বিষয়ে পুরোপুরি একমত হতে পারেনি।’
এর আগে, ১৭ ডিসেম্বরের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই পক্ষের ২০১১ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে জোর দেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি এবং তার সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
দুই নেতা মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার এ ছয় অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কাঠামো দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় সেচের কাজে কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারের জন্য রহিমপুর খালের খনন কাজ যেন সীমান্ত সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শেষ করতে দেয়, সে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
মার্চে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং এ বছর ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করবে।
আরও পড়ুন: তিস্তা চুক্তি, কোভিড টিকা সরবরাহ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি পুনরাবৃত্তি
বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয়: হাইকমিশনার দোরাইস্বামী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ‘মুজিববর্ষ" উদযাপন করছে যা ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারত প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সম্মেলন করার বিষয়ে আলোচনা করছে।
মোদির বাংলাদেশ সফর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র সচিব দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের এজেন্ডা নিয়েও আলোচনা করবেন।
তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সাথে সাক্ষাত করবেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের একটি চিঠি হস্তান্তর করবেন।
এর আগে ড. মোমেন দু'দেশের দৃঢ়, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রক্ষায় ভারতের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের নিকটতম বন্ধু রাষ্ট্র। ভারতও একইভাবে চিন্তা করে। আমি মনে করি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, তারা ২০২১ সালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের বছরে ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়ে ‘খুব দ্রুত’ পদক্ষেপ নিয়ে দেখাতে চায় যে দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং ভাগ করে নেয়ার চেতনা খুব দৃঢ় রয়েছে।
আরও পড়ুন: জনকূটনীতি প্রচারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সাথে (ছয়টি অভিন্ন নদী) পানিবণ্টনে কোনো বাধা দেখছি না। আমি মনে করি আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি। এখানে মূল বিষয় হলো হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আসা।’
হাইকমিশনার বলেন, ‘পানি সবার জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয় এবং সকলেরই পানির প্রয়োজন। উভয় পক্ষই তথ্য সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তাই, আমাদের এবং আপনাদের পক্ষের নিশ্চিত হওয়া উচিত যে তথ্যে দুই পক্ষই একমত হয়েছে কি না।’
পানি সম্পদ সচিবরা শিগগিরই নয়াদিল্লিতে একটি বৈঠক করবেন বলে তিনি জানান।
করোনা মহামারিতে সুযোগ থাকলে ২০২১ সালে যৌথ নদী কমিশনের সভা করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা পানি ভাগ করে নেব। আমরা বন্ধু, আমরা প্রতিবেশী। আমি মনে করি এটি খুব দ্রুত অগ্রসর হবে।’
৩০ জানুয়ারি সুষমা স্বরাজ ইনস্টিটিউট অব ফরেন সার্ভিসে (এসএসআইএফএস) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন পররাষ্ট্র সচিব।
মাসুদ মোমেন নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত কূটনীতিকদের সাথেও এক সাক্ষাতে মিলিত হবেন।