নির্বাচনে সরকারের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আইনের সংস্কারের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে সুপারিশমালা তুলে ধরে টিআইবি।
টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়েরসহ ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশনকে এই সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানায়।
বৈঠকে টিআইবির গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশনের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরে আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন সবার জন্য অংশগ্রহণমূলক করা, নির্বাচনে সবার জন্য সমান ক্ষেত্র নিশ্চিত করা, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং আইনি সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য মনিটরিং বডি প্রয়োজন: টিআইবি
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে সবার জন্য সমান ক্ষেত্র নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্র, আচরণ, আকার এবং গঠন কি হবে তা নিয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা এবং উদ্বেগ রয়েছে। তাই নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন কমিশন তার সুচিন্তিত পরামর্শ দিতে পারে। একইভাবে প্রয়োজনীয় আইনের সংস্কার করার প্রস্তাবও দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করেই নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ গ্রহণ করলে অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতার সমান ক্ষেত্র নিশ্চিতে আইন সংস্কারের প্রস্তাব রাখতে পারে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া আমাদের সুপারিশ হলো-নির্বাচনকালে তথ্য প্রকাশ যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। গণমাধ্যমসহ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকগণ যাতে অবাধ ও বাধাহীন পরিবেশে কার্যক্রম চালাতে পারে। নির্বাচনের সময় ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ না রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ইভিএম যেন কারিগরিভাবে নির্ভুল হয় এবং সকল অংশীজনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তা নিশ্চিত করেই নির্বাচন কমিশন এটিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করবে- আমাদের এই প্রত্যাশার কথাও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।’
ড. জামান আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এটি করার জন্য তাদের নিজস্ব বিশ্লেষণে তারা যদি মনে করেন কোনো আইন সংস্কারের প্রয়োজন, তাহলে তা প্রস্তাব করতে পারেন। কোনো আইন কিন্তু পাথরে খোদাই করে লেখা না, সংবিধানও পাথরে খোদাই করে লেখা নয়। সংবিধান এবং আইন এখন পর্যন্ত যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, তা পরিবর্তনের মাধ্যমেই হয়েছে। কাজেই এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে কোনো ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বা আইন সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে তারা সেই প্রস্তাব করবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন কি-না তা পরে বিবেচনার বিষয়।’
আরও পড়ুন: বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ বাতিলের আহ্বান টিআইবির
৩ বিদ্যুৎ প্রকল্পে জমি ক্রয়ে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি