পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তে ‘স্বাধীন পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এ আবেদনের শুনানি শেষে আগামী রবিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে এ রিট আবেদন দাখিল করা হয়।
আরও পড়ুন: রিজেন্সির কবির-ফাহিমের জামিন বিষয়ে আদালতের ব্যাখ্যা তলব
এ বিষয়ে মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘যে কোনো মামলায় ‘তদন্ত’ হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্তই হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠু তদন্ত সংবিধানের ৩৫(৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। কিন্তু বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকেই দেয়া হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছিল। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু সেই খসড়া অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হয়নি। এমন বাস্তবতায় স্বাধীন পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়। রিট আবেদনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়। কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে তাদের মতামতসহ প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দাখিল করবে। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পরিবেশের ডিজিসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
আইনজীবী শিশির মনির আরও জানান, আবেদনে পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, পুলিশের গৌরবময় অর্জনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা বিধানের বর্তমান আইনি কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৫৮৯টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। সেসব ঘটনার সংবাদ রিট আবেদনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রিটে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে উল্লেখ করে শিশির মনির আরও জানান, দৃষ্টান্ত হিসেবে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা ছয়টি মামলার অনুলিপি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা চূড়ান্ত রিপোর্ট বা আপসের মাধ্যমে অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন। অ্যাডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাইফুল ইসলাম, শিকদার মাহমুদুর রাজি, শ্যাম সুন্দর দাস, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম, মো. শাহাবুদ্দিন খান (লার্জ), অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল আলীমসহ ১০২ জন আইনজীবী এ রিট করেন।
আরও পড়ুন: আদালতে বসতে পারবেন না সেই বিচারক