শুধু সরকারের দুর্বলতা নয়, সফলতার দিকগুলোও গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক
তিনি বলেন, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেঁধে দিলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এ নিয়ে সমালোচনা করেন, আমরা মেনে নেব। কারণ, এটা আমাদের দুর্বল দিক। কিন্তু আমাদের সবল দিকগুলোও দয়া করে মিডিয়াতে তুলে ধরবেন।
রবিবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: নিজেদের খোঁড়া কবর থেকে উঠতে পারবে না বিএনপি: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ডাল, তেল এগুলো এগুলো আমদানি নির্ভর, সেখানে আমরা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারি না। কিন্তু সবগুলো মিলে একজন মানুষের জীবনধারণের জন্য যে খাদ্য খাই তার মধ্যে চালের পেছনে খরচ হয় ৬৫-৭০ ভাগ। কাজেই চালটা কিন্তু প্রথম ও প্রধান উপাদান খাদ্যের। পেঁয়াজের দাম আলুর দাম কতটুকু সেটা আমি ওইভাবে বলতে চাই না। তবে চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যূনতম যে খাবারটা সেটা কিন্তু কিনতে পারছে।
আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি। আমরা এখনও যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। উৎপাদনের পার্টটা হলো আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজার মনিটর করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারপরেও আমি দায় এড়াতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডনসিয়াল ফর্মে প্রেসিডেন্ট সব দায়িত্ব পালন করেন। কেবিনেট সিস্টেম অব গভর্মেন্টে সব মন্ত্রীই সব কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী, প্রধানমন্ত্রীসহ।
তিনি বলেন, কাজেই আমরা মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি। আমরা চেষ্টা করছি। কোল্ডস্টোরেজের মালিকরা খুবই অসহযোগিতা করছে, তারা ঠিকমতো সরবরাহ করছে না। এটা বড় অন্তরায়, নানাভাবে আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ লেভেলে তাদের চাপ সৃষ্টি করলেও সাপ্লাইই দেয় না। বন্ধ-টন্ধ করে চলে যায়, এ ধরনের কিছু ব্যাপার রয়েছে, তা সত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজ তোলার পর দুই মাসের বেশি থাকে না। পেঁয়াজ পচে যায়, শুকিয়ে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসে আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত বছর যথেষ্ট পেঁয়াজ হয়েছিল, চাষিরা বিক্রি করতে পারেনি। আলুরও একই অবস্থা হয়েছিল, রাস্তায় ফেলে দিয়েছে, এবার উল্টো পরিস্থিতি। দুই-তিন লাখ কম হয়েছে এই সুযোগে কোল্ড স্টোরেজের মালিক ও আড়ৎদাররা ব্যাপকভাবে মুনাফা করছে। এত লাভ করা উচিত না। ২০ টাকা খরচ হয় না সেটাকে সে ৪০-৫০ টাকা বিক্রি করছে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, ওভাবে পেঁয়াজ রাখলে ৫ শতাংশও পচে না। এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। নতুন জাত বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন হেক্টরে ৪০-৫০ টন উৎপাদন হয়। আগামী দিনে বাংলাদেশে পেঁয়াজেরও কোনো সমস্যা থাকবে না।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল পেঁয়াজে আমরা স্বনির্ভর হতে চাই। তার জন্য সাময়িক একটু কষ্ট হয়েছে। মানুষ বেশি দামে কিনেছে, কিন্তু চাষিদের আমরা উৎসাহিত করছি। স্থানীয়ভাবে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন করব।
তিনি বলেন, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি। এদিক দিয়ে আমরা খুবই একটা ভালো অবস্থায় আছি। শীতকাল আসছে, পর্যাপ্ত সবজি হবে। সব সবজির দামই কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি। আরও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি আছে, এসব বিবেচনায় সবজি ও অনেক পণ্যের দাম বেশি।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে: কৃষিমন্ত্রী
খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে কম সময়ে অধিক ফলনে গুরুত্ব দিচ্ছি: কৃষিমন্ত্রী