সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বুধবার ঘটে যাওয়া সব ঘটনা প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে তুলে ধরেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী নেতারা।
এ সময় আপিল বিভাগের অপর সাত বিচারপতিও উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধান বিচারপতি সমিতির বিএনপি সমর্থক সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে বেলা ১১টায় তার খাসকামরায় যাওয়ার জন্য বলেন।
প্রয়োজনে এ সময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকেও ডেকে নেয়া যেতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি: সুপ্রিমকোর্টের এফিডেভিড শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে বদলি
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখন আদালতের কাজ করতে দেন। আপনারা দু’জন বেলা ১১টায় খাসকামরায় এসে সব বলেন। আমরা শুনবো। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও ডেকে নেব।’
এর আগে সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমেই সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিএনপি ফোরামের নেতা এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে বুধবার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। এটা এখনও চলামান রয়েছে। আজও রুমের তালা লাগানো আছে, অনেকের রুমের চারপাশে পুলিশ দেয়া হয়েছে। আজও কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘বাইরে থেকে এ ঘটনার পেছনে কেউ আছে কি না দেখতে হবে। এই অঙ্গনে এটা কি অনুমোদিত? এ ছাড়া তারা সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্যদেরও নির্যাতন করেছে। আমরা সুরক্ষা চাই।’
এরপর সমিতির সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সমিতির একজন সদস্য হিসেবে আমি মনে করি আমাদের যে কোনো দু:খ, কষ্ট, ব্যাথা অভিভাবক হিসেবে আপনাদেরকে জানানো উচিত। সমিতির নির্বাচন হয় সব সময় উৎসবমুখর পরিবেশে। কিন্তু এবার কি হলো! আজও আমি রুমে ঢুকতে পারিনি।
তিনি বলেন, রুমের বাইরে থেকে তালা লাগানো। বুধবার আমার ওপর আক্রমন করে গাউন ছিড়ে ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার একটা পুরাতন গাউন ধার করে গায়ে দিয়ে এসেছি। হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। আমার আইনজীবীরা আহত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমি প্রার্থী, আমি কেন ভোট কেন্দ্রে থাকতে পারবো না?
ব্যারিস্টার কাজল আদালতে বলেন, বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরীকে প্রধান করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়। ১৩ মার্চ বিকালেও সে দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু সন্ধ্যায় পদত্যাগ করেছে। হঠাৎ তার কি হলো?
আরও পড়ুন: পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য ও গ্যাস লাইন পর্যবেক্ষণে প্রতি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের
পরে তিনি আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। তারা আলাদা ব্যালট পেপার তৈরি করে এনে বলেছে যেভাবে বলবে, সেভাবে কাজ করতে হবে। সেজন্য সে পদত্যাগ করেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন সে পদত্যাগ করলেও সর্বসম্মতিক্রমে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু না করেই তারা ভোটগ্রহণ শুরু করেছে। এরপর রাতে মনিরুজ্জামান সাহেব বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আমাকে ও সভাপতি প্রার্থীসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় একটি মামলা করা হয়েছে সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দিয়ে। সেখানে সমিতির বর্তমান ছয়জন নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, মি. রুহুল কুদ্দুস কাজল আমি আপনাদের সবাইকে সম্মান করি। আপনারা দুইজন ১১টার সময় আসেন। কোনো করণীয় থাকলে করবো। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও ডেকে নেব বলে জানান প্রধান বিচারপতি।
এরপর সমিতির সভাপতি পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, নজিরবিহীন ঘটনা। ভোটকেন্দ্রে ৩০০-৪০০ পুলিশ ঢুকে ধাক্কা দিতে থাকে। সবাই পড়ে যাচ্ছিল আর পুলিশ বুট দিয়ে পাড়িয়েছে। আমার পায়ে ব্যাথা আমি ঠিকমতো দাড়াতে পারছি না। অনেক আইনজীবী আহত। সাংবাদিকদেরকেও আহত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসময় ব্যারিস্টার রুমের তালা খুলে দেয়ার ও পুলিশ সরানোর আবেদন জানান।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা এখন বললে আদেশ হয়ে যাবে। আপনারা আসেন, তখন দেখবো।
আরও পড়ুন: এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজে যাবে: প্রশ্ন হাইকোর্টের