ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ করেছে এবং বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমর্থন প্রকাশ করেছে।
বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৮তম নিরাপত্তা সংলাপে জিসোমিয়া এবং অকসা এর মতো প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে দুই পক্ষ গঠনমূলক আলোচনা করেছে।
ওয়াশিংটন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পক্ষে র্যাব কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে খুশি হব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে র্যাবের অগ্রণী ভূমিকা তুলে ধরেছে এবং র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাগুলো যে অযৌক্তিক তাও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুই পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অ্যাম্বাসেডর বনি ডেনিস জেনকিন্স নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন: জাতীয় স্বার্থ চালিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: মোমেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন সহকারী সচিব জেসিকা লুইস এবং ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কেলি কেইডারলিং।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়ারকার-উজ-জামানও আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে।
মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সাথে দৃঢ় সম্পর্কের প্রশংসা করেছে, যা উভয় পক্ষের মধ্যে নিয়মিত সংলাপের মধ্যে ভালোভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
দিনব্যাপী বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, বাংলাদেশ ইউএস সিকিউরিটি কো-অপারেশনসহ সামরিক প্রশিক্ষণ, সমুদ্র নিরাপত্তা, প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি, প্রতিরক্ষা ক্রয় ও সক্ষমতা উন্নয়ন ইত্যাদি, আঞ্চলিক সমস্যা যেমন রোহিঙ্গা, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং সন্ত্রাস দমন ও বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রগুলো কভার করা হয়।
মার্কিন প্রতিনিধি দল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্য ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে।
তারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে ইচ্ছুক।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস দমনে র্যাবের ভূমিকা স্বীকৃত, তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে: ব্লিনকেন
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং এবং সম্ভাব্য সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রশংসা করেছে এবং মার্কিন পক্ষকে ফলোআপ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে একীভূত হয়েছে এবং বৈশ্বিক সংকট ও সমস্যা সমাধানে অংশ নিচ্ছে।
দুই পক্ষ সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনে শক্তিশালী সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইন প্রয়োগকারী এবং প্রসিকিউটরিয়াল সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলায় অব্যাহত সমর্থনের বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছে।
ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট দ্রুত পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে উভয় পক্ষ বিমান নিরাপত্তায় সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেছে।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত জোরালো সমর্থনের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ।
দুই পক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে। পরবর্তী নিরাপত্তা সংলাপ আগামী বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।