জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএইড) মানবিক সহায়তা ব্যুরো (বিএইচএ) থেকে ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তাকে স্বাগত জানিয়েছে।
'সময়োপযোগী' এই সহায়তা কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষায় ডব্লিউএফপির প্রচেষ্টাকে উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করবে। যেখানে মিয়ানমারে তাৎক্ষণিক প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা ছাড়াই ১০ লাখ রোহিঙ্গা নিয়মিত দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে ইউএসএইডের মিশন ডিরেক্টর রিড এশলিম্যান কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পগুলোতে দেখেছি, একের পর এক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ সহযোগিতায় নেতৃত্ব দিলেও আমরা স্বীকার করছি- বছরটি শরণার্থীদের জন্য বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা বা তাদের জায়গা দেওয়া বাংলাদেশের উদার সম্প্রদায়গুলোর প্রয়োজনকে অবহেলা করতে পারি না। এর জন্য প্রয়োজন সরকার, দাতা ও উন্নয়ন অংশীদারদের অব্যাহত সমর্থন।’
সংকটের সপ্তম বছরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা চলাচলের সীমিত স্বাধীনতা, চাকরির সুযোগের অভাব এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে অত্যন্ত অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে।
ক্যাম্পগুলো ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো জলবায়ু সম্পর্কিত দুর্যোগসহ নানা ঝুঁকিতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও ৮৭ মিলিয়ন ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেলি বলেন, ‘এমন এক সময় যখন একাধিক সংকট দেখা দিয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও অনেক দাতাগোষ্ঠী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য উদার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে সহযোগিতা পাওয়া গেছে তাতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে খাবারের জন্য বরাদ্দ ৮ ডলার থেকে ১০ ডলারে উন্নীত করা যাবে। আমরা এই ইতিবাচক উন্নয়নে অত্যন্ত আনন্দিত এবং আশা করি রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে দাতারা অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে।
২০২৩ সালে তীব্র তহবিল ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি খাদ্যের জন্য বরাদ্দ অর্থ কমাতে বাধ্য হয়। ফলে, মার্চে প্রতি মাসে মাথাপিছু ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হয় এবং জুনে তা ৮ ডলারে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তার পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় দাঁড়ায়।
নভেম্বরের ডব্লিউএফপির সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কক্সবাজারের শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশের পর্যাপ্ত খাদ্য নেই, যা জুনে ছিল ৭৯ শতাংশ। তখন পরিবারগুলোকে কম পুষ্টিকর খাবারের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাছাড়া শিশুদের খাবার দিতে মা-বাবাদের কম খাওয়ার পথ বেছে নিতে হয়। মাঝেমধ্যে কোনো বেলার খাবার না খেয়েই থাকতে হয়েছে।
শিশুদের মধ্যে পুষ্টি ঘাটতি বাড়ছে।বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক বছর আগের তুলনায় সেপ্টেম্বরে, বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে আরও বেশি শিশু, যাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার শিশু গুরুতর ও মাঝারি মাপের অপুষ্টির জন্য চিকিৎসা প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছে।
বিএইচএ তহবিল রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি কক্সবাজার ও ভাসানচরে পুষ্টি, স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ডব্লিউএফপির কাজে ব্যবহার করা হবে।
ডব্লিউএফপির পুষ্টি কর্মসূচির মাধ্যমে কক্সবাজারের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের প্রায় ৮ হাজার শিশু এবং ৪ হাজার গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো নারীকে সহায়তা করা হবে।
ডব্লিউএফপি নতুন বছরে কক্সবাজারে তাদের খাদ্যে ফর্টিফাইড চাল চালুর পরিকল্পনা করেছে এবং পুরো রেশন পুনরুদ্ধারের জন্য আরও ৭৯ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় সহায়তা দিন: ওআইসি সদস্য দেশগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী