তিনি বলেন, ‘মিথ্যা অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়া বাকস্বাধীনতা নয়, যেকোনো মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করা উচিত, মানুষকে আসল ঘটনা জানতে হবে, চুপ করে বসে থাকা যাবে না।’
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সভায় যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো ঘটনার সত্য কথা বলার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য কিছুটা ব্যথা হতে পারে তবে শেষ পর্যন্ত এটি অবশ্যই কাজ করবে এবং এটিই বাস্তবতা।
আরও পড়ুন: দেশ ৭৫ পরবর্তী অন্ধকারে নিমজ্জিত হোক, চাই না: প্রধানমন্ত্রী
একটি অংশ দেশের জনগণ ও বাংলাদেশ সরকারের ক্ষতি করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওই অংশের লোকদের থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পর্কিত সমস্ত ঘটনার সত্য এবং আসল তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অংশ নিজেদের ইচ্ছামত গুজব ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি কলুষিত করার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা কখনও তাদের খারাপ উদ্দেশ্য পূরণে সফল হতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘অরাজকতা সৃষ্টি করার সুযোগের নাম বাকস্বাধীনতা? সংঘাত সৃষ্টির জন্য যারা বক্তৃতা দিচ্ছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা মানে কি বাকস্বাধীনতা হরণ করা? এটা সঠিক নয়।’
‘ডিজিটাল মিডিয়ার এই যুগে এটা মেনে নেওয়া যায় না যে, বাকস্বাধীনতার নামে যে কেউ তার যা ইচ্ছা লিখবে এবং প্রকাশ করবে,’ বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কেউ তার পছন্দ মত, মিথ্যা অপপ্রচার ছড়িয়ে বলতে পারে। যখন সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে, তখন একটি মহল চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সাধারণ মানুষ তা বিবেচনায় নেয় না।’
অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ তথ্যাদি সরবরাহ করাটাও জরুরি বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সরকার প্রধান।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপযুক্ত তথ্য না দিয়ে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণের মানসিকতা ভালো অভ্যাস নয়।
শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় গুজবের একটি ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যলয়ে একটি মেয়েকে নির্যাতন করা হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিল। একদল ষড়যন্ত্রকারীর ছড়িয়ে দেয়া গুজবের কারণে সেদিন পাথর ও প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছিল।
‘বাংলাদেশ যখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতিবাচক অনেক ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত করে অর্থনৈতিক সূচকে আরও উন্নত অবস্থানে পৌঁছেছে, তখনই এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটেছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, যারা দেশের উন্নয়ন না চেয়ে বাংলাদেশ অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাক সেটি চান, তারাই এই অপকর্ম ঘটাচ্ছে।
‘মানুষের মধ্যে সব সময় একটি অংশ থাকে যারা কখনও অন্যের উন্নতির জন্য চিন্তা করে না, তারা সর্বদা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যক্তিগত আগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যখনই তারা তাদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র অনুযায়ী কিছু করতে ব্যর্থ হয়, তখনই তারা সমালোচনা শুরু করে,’ বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং এটি তার স্ব-মর্যাদার সাথে এবং মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করবো: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দেশ ও বিদেশে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী রয়েছে যারা দেশের অগ্রগতি চায় না এবং তারা কখনই চায়নি যে দেশ স্বাধীন হোক। বাংলাদেশ অগ্রগতি দেখে তারা দুঃখ অনুভব করে।
‘তারা (স্বার্থান্বেষী মহল) বাংলাদেশকে একটি গরীব দেশ এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল রাখতে চেয়েছিল,’ বলেন তিনি।
কিন্তু আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।