সাশ্রয়ী নীতি অনুসরণ করে খরচের লাগাম টেনে ধরেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিস। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিল ও আপ্যায়ন খরচ কমিয়ে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে; আর জ্বালানি তেল খরচ কমানো হয়েছে প্রায় ৪ ভাগের এক ভাগ।
এছাড়া, বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের সংসদীয় বাজেট থেকে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ ফেরত দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গত অর্থবছরের জুন-সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যয়ের হিসেব থেকে দেখা যায়, বিদ্যুৎ বিল হ্রাস পেয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, জ্বালানি তেল অকটেন ও ডিজেলের ব্যবহার কমানো হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং আপ্যায়ন খাতের ব্যয় কমানো হয়েছে ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
পযার্য়ক্রমে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও আপ্যায়ন খাতের ব্যয় কমিয়ে আনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
২০২২ সালের জুন মাসে বিদ্যুৎ খাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যয় ছিল ২৩ লাখ আট হাজার ৮৩৮ টাকা। জুন থেকে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ কমিয়ে জুলাইয়ে হয় খরচ ২১ লাখ ৩৮ হাজার ৬২৫ টাকা। জুন থেকে খরচ ৩১ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমিয়ে আগস্টের ব্যয় ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮১৩ টাকা। জুন থেকে খরচ ৪৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ (প্রায় অর্ধেক) কমিয়ে সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় ১২ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৩ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
২০২২ এর জুনে পরিবহনের জন্য জ্বালানি খাতে অকটেন ও ডিজেলের ব্যবহার ছিল ৪১ হাজার ৪০২ লিটার। জুন থেকে চার হাজার ৪০০ লিটার (১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ) কমিয়ে জুলাইয়ে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হয় ৩৭ হাজার ২ লিটার। জুন থেকে ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ ব্যবহার কমিয়ে আগস্টে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হয় ৩৪ হাজার ৮৪১ লিটার। আর জুন মাস থেকে ৯ হাজার ৬৬৬ লিটার তেল (২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ) কম ব্যবহার করে সেপ্টেম্বরে তেলের মোট ব্যবহার ৩১ হাজার ৭৩৬ লিটারে নামিয়ে আনা হয়।
আরও পড়ুন: দাম নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
জুনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আপ্যায়ন ব্যয় ছিল তিন লাখ ২১ হাজার ৬৬৫ টাকা। জুন থেকে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ খরচ কমিয়ে জুলাইয়ের আপ্যায়ন ব্যয় দুই লাখ ৬৭ হাজার ৫৭০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। জুন থেকে ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ কমিয়ে আগস্টের আপ্যায়ন ব্যয় দুই লাখ ১৮ হাজার ৪১০ টাকা। জুন থেকে ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ খরচ কমিয়ে সেপ্টেম্বর আপ্যায়ন ব্যয় এক লাখ ৭৪ হাজার ১২০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সেপ্টেম্বর পরবর্তী মাসগুলোতেও ব্যয় সাশ্রয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ব্যয় কমানোর কাজটি অনেক আগে থেকে শুরু করেছি। বস্তুত দেশে যখন সকল মানুষকে টিকা দেয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখনই তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যেখান থেকে টাকা বাঁচানো যায় সেই টাকা বাঁচিয়ে আমরা যেন অর্থবিভাগকে বলি ওই টাকাটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিতে। সেই কাজটি আমরা ২০২০ সাল থেকে শুরু করেছি।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হলো এবং ঢেউটা বাংলাদেশ পর্যন্ত আসলো তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আমাদের অফিসের ব্যয় আরও কমানোর কাজ শুরু করলাম। প্রথমত আমরা বিদ্যুতে হাত দিলাম। তারপরে আমরা পেট্রোল এবং লুব্রিকেন্টের খাত, সেখানেও খুবই বৈজ্ঞানিক উপায়ে গাড়িগুলোকে একটু রেশনিং করে আমরা সেটাও কমিয়ে এনেছি। একই ভাবে আপ্যায়ন খাতেও আমরা ব্যয় কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আমরা যে আপ্যায়নের মেনুটি করেছি সেটি খুবই সাদামাটা।
বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের সংসদীয় বাজেট থেকে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার কথা জানিয়ে আহসান কিবরিয়া বলেন, এবার বাজেট সংশোধন করতে গিয়ে আমরা দেখলাম বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২৭ কোটি টাকা আমরা সরকারকে দিয়ে দিতে পারি। একই ভাবে আমরা যখন বাজেটের মিটিং করলাম অর্থ বিভাগের সঙ্গে, তখন আমরা দেখালাম কিছু খাত থেকে আমরা ব্যয় সাশ্রয় করতে পারবো। এভাবে আমাদের ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বের হলো এবং এ টাকা আমরা সংসদীয় বাজেট থেকে আমরা অর্থবিভাগের কাছে সমর্পণ করেছি। এ টাকা সরকারের কোষাগারে চলে গেছে।
চলতি অর্থ বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ব্যয় আরও কমে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে আমরা একটা পরিকল্পনা ধরে, অর্থ বছরের শুরু থেকেই আমরা এই ব্যয়টি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আমরা চেষ্টায় আছি যেন অর্থবছরের শেষান্তে অর্থাৎ জুলাইতে গিয়ে আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ব্যয় আরও কমিয়ে ফেলতে পারি।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ-ব্রুনাই দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্পন্ন