বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও এবং রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার অপব্যবহার রোধে আপীল বিভাগের দেয়া নীতিমালা অনুসরণের রায় পুনর্বিবেচেনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগে বৃহস্পতিবার শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগ শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিদ্যামান আইনে কী আছে, রায়ের সুপারিশে কী আছে, তার তুলনামূলক একটি চিত্র দেখানো হবে।
আদালত বলেন, ‘প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।’
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তৈরি করেছি, আইন ও সুপারিশে কী আছে, তা পাশাপাশি রেখেছি।’
আদালত বলেন, ‘তাহলে দাখিল করেন, আমরা দেখি।’ পরে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আরও পড়ুন: ডাণ্ডাবেড়ি-হাতকড়া পরানোর নীতিমালা করতে কমিটি গঠনে রুল
এরপর আদালত বলেন, ‘নট টু ডে।’ পরে আইনজীবীরা জানান, রিভিউ শুনানির জন্য নির্ধারিত দিন আগামী বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি ফের শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
এদিনে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, জেড আই খান পান্না, অনীক আর হক, মো. শাহীনুজ্জামান ও এ এম জামিউল হক।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল। এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।
ফৌজদারী কার্যবিধি ৫৪ ধারার অধীনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া নির্বিচারে আটক বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ (৫) এবং আন্তর্জাতিক নির্যাতন প্রতিরোধ সনদ ১৯৮৪ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার সনদ ১৯৬৬ এর সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করে।
২০১৬ সালে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের পুর্বের রায়টি কিছু পরিবর্তনসহ বহাল রাখেন। আপীল বিভাগ বিনা পরোয়ানায় আটক ও রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ১৩ দফা এবং ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক ও ট্রাইবুন্যালকে অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা প্রদান করে ৯ দফার নীতিমালা প্রদান করেন। পরে এই রায় রিভিউ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন জানায়।
২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ সরকারকে ওই নীতিমালার বিরোধিতার সুনির্দিষ্ট কারণ ও নীতিমালা পরিবর্তনের সুপারিশসমুহ অন্তর্ভুক্ত করে তা একই বছরের ১৬ এপ্রিলের পূর্বে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রদানের নির্দেশ দেন। এরপর কয়েকবার শুনানির জন্য বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় আসে।
আরও পড়ুন: স্বল্প সময়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করা বিচারক ও আইনজীবীদের দায়িত্ব: প্রধান বিচারপতি