বিশ্বশান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার দায়িত্ব নিতে ব্রিকসকে বিশ্বের বাতিঘর হিসেবে গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বহু-মেরুর এ বিশ্বে ব্রিকসকে আমাদের বাতিঘর হিসেবে প্রয়োজন। আমরা আশা করি ব্রিকস বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হবে। অবশ্যই আমাদের শিশু ও তরুণদের কাছে প্রমাণ করতে হবে, আমরা কষ্ট ভোগ করতে পারি, কিন্তু আমরা পরাজিত হই না।’
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ ও ব্রিকস প্লাস সংলাপে দেওয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিকস হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্ষিপ্ত রূপ।
দক্ষিণ আফ্রিকার আয়োজক প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে পক্ষপাতদুষ্ট পছন্দ ও বিভাজন সৃষ্টির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সর্বজনীন নীতি ও মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে। আমাদের অবশ্যই সব হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।’
তিনি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতার বদলে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে সম্পদ বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: গ্লোবাল সাউথে পরিবর্তনের প্রতিনিধি হতে হবে মেয়েদের: ব্রিকস মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে কাজ করে আসছে, যাদের অধিকাংশই আফ্রিকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত হতে পেরে গর্বিত। মিয়ানমার থেকে আসা ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। তাই আমরা বুঝি আফ্রিকায় শরণার্থীদের আতিথেয়তাকারী দেশগুলোর কাঁধের বোঝা কত ভারী।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন, সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে দক্ষতা শেয়ার করতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, সাইবার-অপরাধ ও অর্থপাচার মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়াতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আকাশ ও সামুদ্রিক যোগাযোগ বাড়ানোর উপর জোর দেন।
সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির জন্য আমাদের পাওনা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের জলবায়ু ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইক্যুইটি এবং ঋণের স্থায়িত্বের বিষয়গুলোতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।’
তিনি নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা সংরক্ষণের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৬ সালের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেখান থেকে কমে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, একই সময়ে আমরা চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, তার সরকার সব বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে।
আরও পড়ুন: ব্রিকসে যোগদানে বাংলাদেশকে সমর্থন করবে চীন: প্রেসিডেন্ট শি
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিনামূল্যের সামাজিক আবাসন প্রকল্প তথা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করার পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, মোট সংখ্যার প্রায় ১০৮ শতাংশের মুঠোফোনের সংযোগ রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী গড় সংখ্যার চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমস ১১১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেন রেকর্ড করেছে। যা বিশেষত গ্রামীণ নারীদের ব্যাপকভাবে উপকৃত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখন ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি অংশ নিচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আমরা ১০০ মিলিয়ন মানুষের জন্য ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম চালু করেছি। যার সমস্ত লেনদেন অনলাইনে হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীরা আগে থেকেই পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন। আমাদের সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকার নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের যথেষ্ট যোগ্যতা দেখে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবকাঠামো, শিল্প ও ক্লিন এনার্জিতে আমাদের বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামোর সংস্কারের অপেক্ষা করার সময় আমাদের অবশ্যই কার্যকর বিকল্প থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে মূল আলোচনা শুরু