কৃষি কাজ করেই চলে মো. তাজুল ইসলামের সংসার। তিনি এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তার দিগন্তজোড়া সরিষাখেতে দুলছে থোকায় থোকায় সরিষা। আর কিছুদিন পরই খেতের সরিষা ঘরে তুলবেন তিনি।
কৃষি বিভাগ থেকে সরকারিভাবে দুই কেজি বীজ পেয়েছেন এবং আরও দুই কেজি কিনে এ বছর দেড় একর জমিতে অগ্রহায়ণ মাসে সরিষা আবাদ করেন।
আরও পড়ুন: সরিষা ফুলের হলুদ হাসিতে রঙিন যশোরে দিগন্তজোড়া মাঠ
এতে তার প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তার আশা বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। এমন প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার হাজির হাট বুড়ি মসজিদ সংলগ্ন এলাকার কৃষক মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, গত বছর সরিষা আবাদ করে খুব অল্প সময়ে তার ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। তাই এ বছর আবারও সরিষার আবাদ করেছেন। আগামী বছর তিনি আশা করছেন দুই একর জমিতে আবাদ করবেন। তার মতো এলাকার আবদুল খালেকসহ বহু কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন। কাঁচা সরিষা ফুলের মন জুড়ানো দৃশ্যে যেমন হাসি ফুটেছিল কৃষকের মুখে, তেমনি ভালো ফলন আসায় লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এখন সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষি বিভাগের মতে, ভোলা জেলার সাত উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ বছর জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করতে ১০ হাজার দুইশ’কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মৌসুমে ভোলা জেলায় পাঁচ হাজার আট শত হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। আর উৎপাদন হয়েছিল আট হাজার ১২০ মেট্রিকটন।
লাভজনক ফসল হওয়ায় এ বছর প্রায় ২৮ হাজার কৃষক সরিষা আবাদ করেছে। এ বছর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ হাজার আটশ’হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে।
কৃষকরা জানায়, ভোলা জেলায় সাধারণত বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৬, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-৪ জাতের আবাদ বেশি করা হয়।
আমন ও বোরো ধানের মাঝামাঝি সময়ে চাষ হওয়া সরিষা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। সরিষার পাতা থেকে সৃষ্ট জৈব সার ধানের পুষ্টি জোগান দেয়। বীজ রোপণের পর থেকে সর্বোচ্চ ৮০-৯০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে সরিষার বাম্পার ফলন
প্রথম দিকে আগাছা পরিষ্কারের কাজ ছাড়া তেমন পরিশ্রমও হয় না সরিষা চাষে। তাই স্বল্প সময়ে চাষ সম্ভব বলে অনেক চাষিই সরিষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ভোলার পূর্ব ইলিশার গুপ্ত মুন্সি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পারভেজ মিজি তার সরিষা খেতে শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তিনি জানান, তিনি গত ৮/১০ বছর ধরে সরিষা আবাদ করছেন। এ বছর ৬ গন্ডা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। পাঁচ মণ সরিষা হয়েছে। তিনি ১৮ হাজার টাকায় বিক্রিও করেছেন। তার ১০/১২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।