ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ইউএনবিকে বলেন, ‘এখন থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানো হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আটজন করে কাজ করবেন। একটি ছক করা হয়েছে। এ ছক অনুযায়ী তারা পুরো ওয়ার্ডে কাজ করবেন। আর দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা মশক নিধনের কাজ চলবে।’
লার্ভা চেকিং এবং কীটনাশক স্প্রে করার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে এবং এ দুটি কাজ দৈনন্দিন ভিত্তিতে বছরব্যাপী অব্যাহত থাকবে।
এ কাজগুলো প্রতিদিন মাত্র দুই ঘণ্টা সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন থেকে সিটি করপোরেশন কর্মীরা সারা বছরব্যাপী দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করবেন বলে জানান তাপস।
‘এবার আমরা যে কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছি তা ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করবে বলে আশা করি। এবার আমরা আরও ভালো মানের কীটনাশক ব্যবহার করছি,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মশা নির্মূলের ক্ষেত্রে জনসাধারণ ডিএসসিসির সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের সুফল পাবেন।
‘যে জায়গাগুলোতে মশা নিধনের কাজ চলছে সে সম্পর্কে মানুষ এখন অবগত এবং তারা নিজেরাই এটি তদারকি করতে পারেন। আমি এ বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে অবহিত হয়েছি এবং আশাবাদী যে সাধারণ মানুষ এ উদ্যোগের সুফল পাবেন,’ যোগ করেন তাপস।
ডিএসসিসি এবার বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত একটি সমন্বিত মশা নির্মূল কার্যক্রম গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, শুধুমাত্র কীটনাশক দিয়ে মশা মারা যায় না।
তিনি জানান, কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন জলাশয় এবং নর্দমা পরিষ্কার করার কাজ চলছে।
মেয়র তাপস ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা জলাশয়গুলো পরিষ্কার করছি যাতে পানি জমে না থাকতে পারে। পানি প্রবাহিত হলে মশা ডিম পাড়তে পারবে না এবং এর বিস্তারও ঘটবে না।’
এছাড়া ঢাকার জলাশয়গুলোতে হাঁস ও তেলাপিয়া চাষের জন্য একটি প্রকল্প চলছে বলে জানান তিনি।
‘এ মাছটি (তেলাপিয়া) মশার ডিম খায়। মাসে দুই বার জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা হবে যা আমাদের দ্বিমুখী সুবিধা দেবে। যখন জাল টানা হবে তখন আমরা মাছ পাব এবং একইসাথে পানিও প্রবাহিত হতে থাকবে, যার মাধ্যমে ডেঙ্গুর লার্ভা এবং ডিম ধ্বংস হবে,’ যোগ করেন মেয়র।
ডিএসসিসি ঘিরে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার নর্দমা ছড়িয়ে রয়েছে উল্লেখ করে তাপস বলেন, ‘আমরা মাসে দু’বার এসব নর্দমা পরিষ্কার করব... ইতোমধ্যে উন্মুক্ত স্থান থেকে বর্জ্য সরানোর কাজ শুরু হয়েছে।’
প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়ে ডিএসসিসির মেয়র বলেন, ‘কিছু দিন করেই এসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ হবে না। এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া এবং এটি অব্যাহত থাকবে।’
বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু সমস্যা:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, সাম্প্রতিক দশকে সারা বিশ্বে ডেঙ্গুর প্রকোপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর হালকা লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় এবং রোগী নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে ওঠে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া কঠিন।
ডব্লিউএইচও জানায়, গত দুই দশকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৮ গুণ বেড়েছে। এছাড়া ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৯৬০ থেকে ৪০৩২ জনে।
আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০০টিরও বেশি দেশে এ রোগটি এখন মহামারি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি:
গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ লাখ ১ হজার ৩৫৪ জন এবং এর মধ্যে সুস্থ হন ১ লাখ ১ হজার ৩৭ জন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর মশাবাহিত এ রোগে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়।
শহরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষার লক্ষ্যে গত ৬ জুন থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করা হয়।
আর ৭ জুন থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৩টি ওয়ার্ডে এক বছরব্যাপী মশক বিরোধী কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
এর আগে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গত ১৪ মে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোর জন্য ৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।