প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ের মমতা নিয়ে দেশ পরিচালনা করলে অবশ্যই জনগণের সমর্থন পাওয়া যায়। জনগণ অবশ্যই সমর্থন করবে।
তিনি বলেন, ‘নারীরা শুধু নারী নয়, মা-ও। আপনারা যদি মাতৃস্নেহে দেশ পরিচালনা করেন, তাহলে জনগণ অবশ্যই আপনাদের সমর্থন করবে।’
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দুবাই এক্সপো ২০২০-এর উইমেন প্যাভিলিয়নে আয়োজিত ‘উইমেনস ফিউচার ফর উইমেন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের পাওয়ার প্যানেলে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দেশ পরিচালনায় জনগণের সমর্থন ও আস্থা অর্জন করেছেন এবং এটাই তার প্রধান শক্তি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ বুঝতে পেরেছে যে আমি এখানে থাকলে, তারা অবশ্যই উপকৃত হবে।’
কিন্তু এই যাত্রা এতটা সহজ ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে তার বাবা, মা, তিন ভাই এবং দুই বোনের শ্বশুরসহ তার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল এবং শুধুমাত্র সে এবং তার ছোট বোন এই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: প্রযুক্তির যুগে নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া যাবে না: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা স্মরণ করে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর তিনি যখন দেশে ফিরেছিলেন তখন তার পরিবারের খুনিরা এবং যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় ছিল। সুতরাং, আমার যাত্রাটা খুব মসৃণ ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বারবার গুপ্তহত্যার চেষ্টা এবং অপপ্রচারের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আমি এগুলোকে পাত্তা দিইনি। আমি শুধু ভেবেছি আমাকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায় তাকে সহযোগিতা করার জন্য শেখ হাসিনা তার পুরুষ সহকর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, আমি অবশ্যই তাদের প্রশংসা করি। তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন।
নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংসদে এক অনন্য পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদ উপনেতা নারী।
তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসকরা প্রায় ২১ বছর দেশ শাসন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন তিনি সরকার গঠন করেন তখন তিনি কোথাও নারীদের খুঁজে পাননি।
এরপর তিনি নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে স্নাতক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে নারীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং বিচার ও পুলিশ বিভাগের মতো অন্যান্য সেক্টরের উচ্চ পদে তাদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়।
সামরিক শাসনামলে নারীদের জায়গা কম ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নারীদের জন্য সব খুলে দিয়েছি।
জাতির পিতাকে তার পরামর্শদাতা হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তার কাছ থেকে দেশ ও দেশের সমস্যা সম্পর্কে জেনেছেন।
আরও পড়ুন: ৭ মার্চ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমি তার কাছ থেকে দেশ এবং সমস্যা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছি। আমার বাবা আমার পরামর্শদাতা ছিলেন- আমি আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি । শুধু তাই নয়, আমি (তার কাছ থেকে) মানুষ ও দেশের প্রতি সহানুভূতি এবং ভালবাসা সম্পর্কেও শিখেছি। কীভাবে দরিদ্রদের জন্য কাজ করা যায়।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতির কূটনৈতিক উপদেষ্টা ড. আনোয়ার বিন মোহাম্মদ গারগাশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি, ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া কানেম, ডব্লিউটিও মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-ইওয়ালা এবং কার্টিয়ার ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সিরিল ভিগনেরন প্যানেলে বক্তৃতা করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারে দুবাই এক্সপো ২০২০-তে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন এবং ইউএই প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে মেরিন ক্যাডেটদের ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী