চট্টগ্রামে মিতু হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। নারাজি আবেদনের পরবর্তী শুনানি আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দিয়েছেন।
বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, আমরা আজ বাবুল আক্তারের পক্ষে নারাজি দিয়েছি। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। আগামী ৩ নভেম্বর মামলার পরবর্তী আদেশ দেবেন।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যা মামলায় জামিন পাননি বাবুল আক্তার
তিনি বলেন, আমরা আরেকটি আবেদন করেছি। এর আগে তদন্ত কর্মকর্তারা মিতুর বাবা ও মায়ের সাক্ষাৎকার নিলেও নথিতে সেটি রেকর্ড করেননি। সেই বিষয়টি জানার জন্য একটি আবেদন করেছি। এছাড়া এই মামলাতে ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। এই ৫৩ জনের মধ্যে দুই জন ছাড়া কেউ বাবুল আক্তারের নাম বলেননি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাঁচ বছর পর দুই জন লোককে এনে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে বাবুল আক্তারকে সম্পৃক্ত করেছেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর পরে কোনও সাক্ষীর সাক্ষ্য আইনগতভাবে খুব বেশি গ্রহণযোগ্য বলে আমার কাছে মনে হয় না। আদালতের কাছে এসব বিষয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আদালত সেই বিষয়টি গ্রহণ করেছেন।
শুনানিতে আমি বলেছি- প্রথম মামলার দুইজন আসামি জবানবন্দিতে বলেছেন- মুছার নির্দেশে তারা মিতুকে খুন করেছেন। সেই মুছাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ফেলেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তারা সফটওয়্যারের মাধ্যমে মোবাইলের কললিস্ট পর্যালোচনা করেছেন। কিন্তু কোথাও বাদীর (বাবুল আক্তার) সঙ্গে মুছার যোগাযোগের প্রমাণ পাননি। পাঁচ বছর পর এসে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মোবাইল কললিস্টের সূত্র ধরে বাবুল আক্তারকে ফাঁসানো হয়েছে বলে বাদীর কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আদালত বক্তব্য শুনেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। ৩ নভেম্বর আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যা: আদালতে ভোলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
এর আগে গত ১৪ অক্টোবর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারের করা মামলায় পিবিআই’র দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তার নিজে।
নারাজি আবেদনে বলা হয়েছিল বাবুল ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি এ মামলার বাদী ছিলেন। তাকে আসামি করতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
শুনানির জন্য ফেনী কারাগারে থাকা বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজিরের জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। বুধবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে।
স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যা: বেনাপোল থেকে ভোলা গ্রেপ্তার
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
চলতি বছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিলের পর গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।
ওইদিনই (১২ মে) বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তবে আদালতে জবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার।
এর মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর মামলার এক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করায় তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।