তিন দিনেও শুরু হয়নি ভোলার মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন বোঝাই ডুবে যাওয়া এমভি সাগর নন্দিনী-২ উদ্ধার কাজ। তবে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারে একই মালিকানাধীন অপর তিনটি জাহাজ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির চার সদস্যের তদন্ত কমিটির পাশাপাশি ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রিপন কুমার সাহাকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কর্ণফুলীতে জাহাজডুবি: ক্যাপ্টেনসহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখন পর্যন্ত আদেশের চিঠি পাননি। চিঠি পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবেন।
মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ’র) নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের পরিচালক মো. শাহজাহান।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, সময় বেশি লাগলেও জাহজটিতে থাকা জ্বালানি তেল রক্ষা করে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। ডুবে যাওয়া জাহাজটি দুই সিস্টেমে করা যায়। একটি হলো বার্জ সিস্টেম, অপরটি উইল বার্জ সিস্টেম। তবে এর মধ্যে উইল বার্জ সিস্টেমটি বেশি কার্যকর। তাই সে অনুযায়ী ডুবুরীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে পথে রয়েছেন। ডুবুরী দলটি এসে পৌঁছালে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।
তিনি আরও জানান, নদী থেকে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারকাজ একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। যেহেতু জাহাজটিতে স্পর্শকাতর বিষ্ফোরকদ্রব্য আছে। এটি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য নয়। তাই সময় একটু বেশি লাগলেও তেলটা রক্ষা করে যাতে উদ্ধার কাজ করা সেটিই এখন মূল লক্ষ্য।
এছাড়াও জাহাজের মাস্টারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে যেটি জানা গেছে নদীতে কুয়াশা ছিল। আর সে মেরিন আইনের গাফলতি করে পাইলট ছাড়াই জাহাজ নিয়ে এসেছে। তদন্তে মাস্টারের গাফলতি প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএ, পদ্মা অয়েল কোম্পানি ও জাহাজ মালিক পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা জাহাজ উদ্ধারে ডুবুরী দল ও বার্জের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এছাড়াও ডুবে যাওয়া জাহাজটির সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কোস্ট গার্ড সদস্যরা সেখানে টহল দিচ্ছেন।
তবে সেখানে থাকা কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, ডুবুরী দল আসলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ উদ্ধার অভিযান শুরু হওয়ার কথা।
জাহাজের মালিক এস এইচ আর নেভিগেশন কোম্পানি লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. মেহেদী হাসান জানান, সোমবার বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারে অক্ষমতা প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক মালিক পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই মালিকের সাগর বধূ-৩, সাগর বধূ-৪ ও সাগর নন্দিনী-৩ নামের তিনটি জাহাজ দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজটি উদ্ধারের জন্য ডুবুরি দলসহ ঘটনাস্থলে পঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করার কথা এবং আগামীকাল বুধবারের মধ্যে উদ্ধার অভিযান শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।
অপরদিকে তিন দিন ধরে মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজের তেল ছড়িয়ে পড়ছে।
দ্রুত জাহাজটি উদ্ধার করা না হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিভাগ
কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট এম হাসান মেহেদী জানান, তেলবাহী কার্গো জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার পর থেকেই কোস্ট গার্ড সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা জাহাজটির নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। জাহাজটি উদ্ধারে চাঁদপুর থেকে ‘হুমায়রা’নামের একটি উদ্ধারকারী বার্জ আসতেছে। সেটি আসার পর বলা যাবে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারে কত সময় লাগবে।
এছাড়াও কোস্ট গার্ডের ডুবুরী দলকে নদীতে নামিয়ে জাহাজে তেল রাখার চেম্বারগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে।
চেম্বারগুলো সীল করা রয়েছে। সেখান থেকে বাহিরে তেল বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওপরের অংশ থেকে যে তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলো অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে তুলে ফেলা হয়েছে।
আপাতত তেল বের হয়ে নদীতে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই বলেও জানান এ কর্মকর্তা।