স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস-একথা উল্লেখ না থাকলে যাবজ্জীবন সাজা অর্থ ৩০ বছরের কারাদণ্ড, এই ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ১২০ পৃষ্ঠার এই রায় সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেয়া হয়েছে। রায়ে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতি যাবজ্জীবন করাদণ্ড অর্থ ৩০ বছরের কারাদণ্ডের পক্ষে একমত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, যাবজ্জীবন সাজা অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড। রায়ে বলা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বলতে প্রাথমিকভাবে বাকি জীবন অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস। তবে দণ্ডবিধির ৪৫, ৫৩, ৫৫ ও ৫৭ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ক ধারা একসঙ্গে মিলিয়ে পড়লে এটা স্পষ্ট যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর কারাদণ্ড।
রায়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস উল্লেখ করে তবে সেক্ষেত্রে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ৩৫ক ধারার রেয়াদের সুবিধা পাবেন না।
আরও পড়ুন: শিশু থাকবে মায়ের কাছে, দেখা করতে পারবেন বাবা: হাইকোর্ট
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, এই রায়ের ফলে যারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হবেন অর্থাৎ যাদের সাজা ৩০ বছর হবে তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(এ) ধারা এবং কারাবিধি অনুযায়ী রেয়াদ সুবিধাও ভোগ করবেন। যে আসামির মামলা কেন্দ্র করে এ রায় দেয়া হয়েছে, সেই আতাউর রহমানের রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে তার আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।
এ মামলায় আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (পরে এ এম আমিন উদ্দিন) ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
শুনানিকালে আপিল বিভাগ উভয়পক্ষের আইনজীবী ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জেষ্ঠ্য চার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও সমিতির সভাপতি হিসেবে (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল) অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনের যুক্তি শোনেন।
পড়ুন: হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ: হাইকোর্ট
তালাকনামায় আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
২০০১ সালে সাভারে জামানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০০৩ সালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্ট এই সাজা বহাল রাখেন। তবে আপিল বিভাগ ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়।
রায়ে বলা হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড। এ অবস্থায় আতাউর রহমানসহ আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। এ রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতবছর ১ ডিসেম্বর সংক্ষিপ্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। এরপর আজ (১৫ জুলাই) বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হলো।