স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে গণতান্ত্রিক যাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান মূল্যায়নে একেবারেই স্বস্তিকর কোনো পর্যায়ে যাওয়া যায়নি, যা সত্যিই হতাশার বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবির মতে, এই ঘাটতি রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে শুরু করে স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে নাগরিকের আইনি ও সামাজিক অধিকারসমূহ সুরক্ষার ক্ষেত্রে সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শুদ্ধাচার চর্চা সবকিছুর জন্যই প্রযোজ্য। তাই বাস্তবতাকে অস্বীকার না করে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে টেকসই করতে এবং দেশের শাসনব্যবস্থাসহ সকল রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার পূর্ণ বিকাশে, এখনই সর্বোচ্চ শুদ্ধাচার নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে টিআইবি।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় তথ্য নয় বরং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করুন: টিআইবি
১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অতিসম্প্রতি প্রকাশিত বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে চারধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের ৭৬তম অবস্থান সাময়িক স্বস্তিদায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ ৫.৯৯ স্কোর নিয়ে আমরা এখনও ‘হাইব্রিড রিজিমে’ অবস্থান করছি, যাকে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যাবে না। দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেনি বলেই শুধু বাংলাদেশের এই স্কোর নয়; বরং আমাদের শক্তিশালী বেশ কিছু আইনী কাঠামো থাকলেও সেগুলো পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং ‘আপাত ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তন’ হয় বলে প্রচার থাকলেও বাস্তবে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কাঠামোগত ও আদর্শিক দূর্বলতায় সূচকে আমাদের এই অবস্থান। ‘দেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক এক দিনের গণতন্ত্রও বিলীন হতে চলেছে’ বলে সংসদে সম্প্রতি যে আলোচনা হয়েছে সেটিও দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার দূর্বলতাকে যথার্থভাবেই ফুটিয়ে তুলে, যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।’
আরও পড়ুন: কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল: টিআইবির সতর্ক সাধুবাদ
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে ড. জামান বলেন, ‘একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী তা নির্ভর করে দেশটির নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংসদীয় কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে। কিন্তু বিগত অনেকগুলো বছর ধরেই আমাদের নির্বাচন কমিশন কেমন যেন রুটিন দায়িত্বের অংশ হিসেবে শুধুমাত্র ভোটের আয়োজনেই সন্তুষ্ট; অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলো কিনা, তা নিয়ে তাদের ‘মাথাব্যাথা’ নেই।’ গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ অর্জনে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কাঠামোর আমূল সংস্কার আশু কর্তব্য।’
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য খাত নিয়ে টিআইবি মিথ্যাচার করেছে: মন্ত্রী
টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ সাধনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা চলতি দশকেই এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; অথচ এসডিজির অন্যতম অভীষ্ট (১৬) শান্তি, ন্যয়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান নিশ্চিতে কিছু আইনি সংস্কার ব্যতীত জনগণের অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এখনও দেশের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচারই নিশ্চিত করা যায় নি! সকলের জন্য সমান আইনি সুযোগ অর্জিত হয়নি। অংশগ্রহণমূলক সামাজিক ও আইনি কাঠামো গঠনে এখনো বহু পথ বাকি। গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ সাধনে প্রতিবন্ধক নানা আইন ও নীতিকাঠামোর মাধ্যমে এখনও ভয়হীন, মুক্ত ও স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও জনগণের সমালোচনা এবং রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অবাধে কথা বলার অধিকার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, যা সকল ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। অবিলম্বে এসব বাধা অপসারণ করে, জনগণের পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদানে সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে- যা জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের রুপকল্প ‘সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠন’ এবং অভিলক্ষ ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ; পাশাপাশি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী অঙ্গীকারও বটে!