ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় তামিম হাসান (৮) নামে দগ্ধ আরও এক শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। শিশুটির মা এবং ছোট বোনও লঞ্চে দগ্ধ হয়েছিল। ঢাকায় আনার সময় রাস্তাতেই মারা যায় তামিমের ছোট বোন মাহিনুর (৬)। মা জিয়াসমিন এখনো শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
রবিবার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তামিমের। ইনস্টিটউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে জানান, রবিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে তামিমের মৃত্যু হয়।
এর আগে বুধবার এখানে শাহিনুর নামে ৪৫ বছর বয়সী আরও এক নারীর মৃত্যু হয়। নিহত শাহিনুরের শরীরের ৪০ শতাংশ আগুনে পুড়েছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্রে সংখ্যা ৪৮ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া, রেড ক্রিসেন্ট বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের করা তালিকা অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৫৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার লঞ্চ টার্মিনালে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুম ৪১ জন নিখোঁজ যাত্রীর তথ্য দিয়েছে বলে জানান ঝালকাঠি সদর থানার উপ-পরিদর্শক মো. সালাউদ্দিন।
আরও পড়ুন: লঞ্চে আগুন: দুই চালক কারাগারে
স্মরণকালের ভয়াবহ এই লঞ্চ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রবিবার ঢাকার নৌ আদালত এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের দুই চালককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
তারা হলেন- মামলার অষ্টম আসামি আবুল কালাম (ইনচার্জ চালক) ও সপ্তম আসামি মাসুম বিল্লাহ (দ্বিতীয় চালক)।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর লঞ্চের দুই মাস্টার রিয়াজ সিকদার (মাস্টার ইনচার্জ) ও ৬ষ্ঠ আসামি খলিলুর রহমানকে (২য় মাস্টার) আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে পাঠায় একই আদালত।
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের প্রসিকিউটিং অফিসার অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন বলেন, ইঞ্জিন রুমের সার্বিক দায়িত্ব ইঞ্জিন চালকদের। তারা শুধু তাদের দায়িত্বে অবহেলাই করেনি, আগুনের পর তাদের ভূমিকা ছিল বেপরোয়া।
তিনি আরও বলেছেন, তারা যদি নিখুঁত তত্ত্বাবধানে ইঞ্জিন রুমটি সঠিকভাবে পরিচালনা করত, তাহলে সম্ভবত এই ভয়াবহ বিপর্যয় এড়ানো যেত
অ্যাডভোকেট বিল্লাল বলেন, প্রাথমিকভাবে ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শফিকুর রহমান লঞ্চের চার মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক আদালতে নৌ আইনে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ২৪ ডিসেম্বর ভোররাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। সেসময় লঞ্চটিতে ৮০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল।
আরও পড়ুন: লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: যমজ মেয়ের পর এবার ভেসে এলো মায়ের লাশ!