চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় পরের ৩ মাসে (এপ্রিল-জুন) সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যু হার ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে নারী মৃত্যুর হার কমেছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
অন্যদিকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়লেও মৃত্যুর হার কমেছে ১২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সব মিলিয়ে গত ৩ মাসে নিহত ও আহতের হার বছরের শুরুর ৩ মাসের তুলনায় যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭১ ও ২০ দশমিক ০৬ শতাংশ কমেছে।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে হওয়া সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা শেষে এসসিআরএফ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: জলাভূমি, গাছ এবং নদী রক্ষা করুন: এসসিআরএফ
সংস্থাটি বলেছে, ১২টি বাংলা জাতীয় দৈনিক, ৫টি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ৯টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও নিউজ এজেন্সি এবং ৬টি আঞ্চলিক দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ মাসে সারাদেশে ২ হাজার ৭৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৮৯৮ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৭২০ জন আহত হয়েছেন।
এর মধ্যে প্রথম ৩ মাসে ১ হাজার ৩০২টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৮৪ জন নিহত এবং ২ হাজার ৪৮৫ জন আহত হয়েছেন। পরবর্তী ৩ মাসে ১ হাজার ৪৭৯টি দুর্ঘটনায় যথাক্রমে ১ হাজার ৪১৪ জন নিহত এবং ২ হাজার ২৩৫ জন আহত হয়েছেন।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৩ মাসে নিহত ও আহতের হার শুরুর ৩ মাসের তুলনায় যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭১ ও ২০ দশমিক ০৬ শতাংশ কমেছে।
৬ মাসে ৪০৪ জন নারী ও ৪৫৫টি শিশুর প্রাণ ঝরেছে। এক্ষেত্রে, নারী ও শিশুর মৃত্যুর হার যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯৪ ও ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ৩ মাসে ২১১ জন নারী এবং পরের ৩ মাসে ১৯৩ জন নারী সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে নারী মৃত্যুর হার কমেছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
একই সময়ে প্রথম ৩ মাসে ২১০টি শিশু এবং পরের ৩ মাসে ২৪৫টি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। ফলে, শিশুমৃত্যু হার বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক নাদিমের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এসসিআরএফ
অন্যদিকে, ৬ মাসে ১ হাজার ৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৮৮ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৭৯ ও ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ৩ মাসে ৫২৭টি দুর্ঘটনায় ৫৭৯ জন এবং পরের ৩ মাসে ৫৫২টি দুর্ঘটনায় ৫০৯ জন নিহত হয়েছেন।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম ৩ মাসের তুলনায় গত ৩ মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়লেও মৃত্যুর হার কমেছে ১২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
এসসিআরএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৭ জন পথচারী মারা গেছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩৭০ জন এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৩০৭ জন নিহত হয়েছেন। এতে, ৩ মাসের ব্যবধানে পথচারীদের মৃত্যুর হার কমেছে ১৭ দশমিক ০২ শতাংশ।
পর্যালোচনায় সড়ক দুর্ঘটনার ১৬টি কারণ চিহ্নিত করেছে এসসিআরএফ। সেগুলো হলো- ফিটনেসবিহীন যানবাহন; অদক্ষ ও শারীরিকভাবে অনুপযুক্ত চালক; বেপরোয়া গাড়ি চালানো; প্রচলিত আইন ও প্রবিধান লঙ্ঘন করে ওভারটেকিং; নিয়োগপত্র না থাকা এবং নির্ধারিত সাপ্তাহিক ছুটি ও কর্মঘণ্টা না থাকায় চালক ও সহকারীদের মানসিক অবসাদ; বিভিন্ন স্থানে জরাজীর্ণ সড়ক; জাতীয় মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট; দূরপাল্লার সড়কে ভাড়ায় বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেলের চলাচল; মহাসড়কে ধীর গতির ৩ চাকার গাড়ি; যুবক ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো; বিআরটিএ'র সক্ষমতা না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম ও দুর্নীতি; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব; চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; বিদ্যমান আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শিথিলতা এবং টার্মিনাল ও মহাসড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি।