ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’-এ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘সাবরিনা’। ৮ পর্বের এই ওয়েব সিরিজকে নারীকেন্দ্রিক গল্প বলা হলেও এতে উঠে এসেছে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্র। দুই নারীর গল্পের মধ্য দিয়ে যা দেখানো হয়েছে। ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে এ নিয়ে কথা বলেন ওয়েব সিরিজটির নির্মাতা আশফাক নিপুণ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু
‘সাবরিনা’র গল্পের পাশাপাশি আপনার লোকেশন নির্বাচনও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু শুটিং ঠিক কোথায় করেছেন সেটি জানা যায়নি। এ নিয়ে শুরুতে জানতে চাইব।
লোকেশনের বিস্তারিত আমি ইচ্ছে করেই জানাতে চাইনা। কারণ যখন আমরা স্ক্রিনে কোন দৃশ্য দেখি, তার লোকেশনও আমাদের আন্দোলিত করে। পরিচিত হলে কানেক্ট করে কোথাও, অপরিচিত হলে উৎসুক করে। যদি বলেই দেই কোথায় কোথায় শ্যটিং করেছি তাহলে সেই আগ্রহ শেষ হয়ে যায়। আমরা মেট্রোপলিটান শহরের আবহের বাইরে গিয়ে একটি গল্প দেখাতে চেয়েছি। তাই ঢাকার বাইরে দূরে কিছু লোকেশনে আমরা ২১ দিন শুটিং করেছি।
ওয়েব সিরিজটিকে শুরু থেকেই শুধু নারীকেন্দ্রিক গল্প বলা হচ্ছে। যদিও আপনি পুরো গল্পে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। তাহলে কী কেন্দ্রিয় চরিত্রে নারী কাস্টিং থাকায় এমনটা হয়েছে?
গল্পটা আসলে সাবরিনাকে নিয়েই। এখানে মূল যে দুটি চরিত্র তারা নারী এবং তারাই কেন্দ্রীয় চরিত্র। নামকরণও তাই করা হয়েছে ‘সাবরিনা’। তবে আমি যখন গল্প বলি, সেটি ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজ হোক বা টেলিভিশনে শেষ যে কয়টি কাজ করেছি সেখানেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিফলন রাখার চেষ্টা ছিল সবসময়। সেই জায়গা থেকে ‘সাবরিনা’তে দুই নারীর গল্পের মাধ্যমে দেশের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধরেছি। একটা দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার শিকার সবচেয়ে বেশি হয় নারীরা। অতি সম্প্রতি টিপ পরা নিয়েও একজন নারী হেনস্থার শিকার হয়েছেন। পুরো বিষয়টাই আসলে রাজনৈতিক। কখনো হয়তো ধর্মীয় রাজনৈতিক, কখনো সামাজিক রাজনৈতিক, আবার কখনো রাষ্ট্রীয় রাজনীতির শিকার আমরা। ‘সাবরিনা’ র পটভূমি এবং গল্পও তাই। আর এটি এখন পর্যন্ত আমার নির্মিত সবচেয়ে শক্তিশালী পলিটিক্যাল গল্প। আমি চেয়েছিলাম দর্শক নিজেই আবিস্কার করুক সেটা সিরিজ দেখতে দেখতে। তাই হয়েছে। দর্শকই বলছে সমকালীন রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে দুই নারীর এক শক্তিশালী গল্প ‘সাবরিনা’।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসার পর আপনি দেশের গল্পে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যেভাবে দেখাতে পারছেন, টেলিভিশনে এমনটা দেখাতে পারতেন?
অবশ্যই না। আমাদের এখানে টেলিভিশন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টেলিভিশনের মত স্বাধীনচেতা না। একটা ভয়ের সংস্কৃতি এখন অনেক বেশি চলমান। রাষ্ট্রীয় সেন্সরশীপ এর ভয়ে সেল্ফ সেন্সরশীপ জেঁকে বসেছে টেলিভিশনের মাঝেই। তাই মূলত সংবাদ আর নিছক বিনোদন নির্ভর কন্টেন্ট দিয়েই তাই চলছে টেলিভিশন। কারণ যেকোনো সময় যেকোনো কনটেন্টের ওপর রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক বাঁধা আসার আশঙ্কাও রয়েছে। এছাড়া টেলিভিশন এখন পুরোটাই স্পনসর নির্ভর। স্পনসররাও রিস্কি কন্টেন্টের চ্যালেঞ্জ নিতে চান না, ফাইন্যান্স করতে চান না। আর ওটিটির সুবিধা এটি দর্শককে সাবস্ক্রিপশন নিয়ে দেখতে হয়। এখানে দর্শক স্বেচ্ছায় টাকা খরচ করে এমন কিছু দেখতে চান যা ফ্রি মিডিয়ামে (টিভি, ইউটিউব) এ সে দেখতে পায় না। এখানে দর্শক প্রিমিয়াম কন্টেন্ট খোঁজে। তাই এখানে কানেক্ট করতে পারে এমন সাহসী এবং ভিন্ন ধরনের গল্পের চাহিদা বেশি।
মহানগর’-এর মতো ‘সাবরিনা’ও শেষ করলেন না। দ্বিতীয় সিজন নিয়ে কী পরিকল্পনা?
‘সাবরিনা’ নির্মাণের শুরু থেকেই এটি দ্বিতীয় সিজনের পরিকল্পনা করেই এগোনো। প্রথম সিজন ছিল সূত্রধরের মত। যে কয়টি গল্প দেখানো হয়েছে সবগুলো আরও খোলতাই করে পরবর্তীতে দেখা যাবে। আসলে একটা গল্পকে তো চাইলে যেকোন সময় শেষ করা যায়। ‘সাবরিনা’কেও হয়ত ৮ পর্বে শেষ করতে পারতাম। কিন্তু সেটা চাইনি আমি কারণ ‘সাবরিনা’র ব্যাপ্তি অনেক বড়। পরবর্তী সিজন এলে দর্শক সেটা আরও ভালো বুঝতে পারবেন। শিগগিরই দ্বিতীয় সিজনের গল্প লেখার কাজ শুরু করব।
ছোটপর্দায় এই ধরনের গল্প দেখার পর দর্শকদের মধ্যে আপনার সিনেমাও দেখার আগ্রহও তৈরি হয়েছে। সেই খবর কবে দিচ্ছেন?
আমার প্রথম সিনেমা ‘গোল্লা’ নিয়ে ২০১৯ থেকে কাজ শুরু করি। কিন্তু মহামারির কারণে এর সব পরিকল্পনা ওলোটপালট হয়ে যায়। ‘সাবরিনা’ পোস্ট প্রোডাকশনের কাজের সময় ‘গোল্লা’ নিয়ে আবারও পরিকল্পনা শুরু করি। এখন তো ‘মহানগর’ এবং ‘সাবরিনা’ দুটি সিরিজের দ্বিতীয় সিজনের কাজ বাকি। আরও কিছু ওটিটি কন্টেন্টের ব্যাপারেও কথা চলছে। দেখা যাক কবে নাগাদ পুরোপুরি সিনেমার কাজে হাত দিতে পারি।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ নাটক ‘নিহত নক্ষত্র’