দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর দখলমুক্ত করে অবশেষে পুনঃখনন করা হলেও বেশ কয়েকটি অপরিকল্পিত সেতুর কারণে ঐতিহ্যবাহী বরগুনার ভারানি খাল প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, বরগুনার প্রমত্তা পায়রা ও খাকদোন এই দুই নদের সংযোগ রক্ষাকারী ভারানী খাল দুই পাড়ে বহুবছর ধরে অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে মরা খালে পরিণত হয়েছিল। খাকদোন নদের এ শাখা খালটি বরগুনা শহরের মাছবাজার এলাকার মাদরাসা সড়ক হয়ে বরগুনা সদর ও বুড়িরচর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে ৯ কিলোমিটার গিয়ে পায়রা নদে গিয়ে যুক্ত হয়েছে। আর এই ৯ কিলোমিটারের মধ্যে মোট ১১টি সেতু গড়ে উঠেছে। প্রতিটা সেতুই এমন অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে যে বর্ষা মৌসুমে যেকোনো ছোট-বড় নৌযানের এই সেতুগুলোর নিচ দিয়ে যাতায়াত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বরগুনা সদর উপজেলার সঙ্গে নৌপথ কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের নির্ভরযোগ্য চলাচলের মাধ্যম ছিল খালটি। কিন্তু দখলদারদের দৌরাত্ম্য ও দূষণে সময়ের ব্যবধানে এটি মরা খালে পরিণত হয়। একই সঙ্গে ভারানি খালের সঙ্গে সংযুক্ত আরও সাতটি শাখা খালেরও একই অবস্থা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভারানি খাল দখলমুক্ত ও পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। খালের দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর পুনঃখননের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তবে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ১১টি সেতু বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই সেতুগুলো ভেঙে পরিকল্পিতভাবে পুননির্মাণ না করা হলে এ খাল কখনোই প্রাণ খুঁজে পাবে না বলে অভিমত প্রকাশ করছেন অনেকেই।
২০১৭ সালে স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা খালটি দখলমুক্ত করতে আন্দোলন শুরু করেন। দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ দফায় দফায় বরগুনায় অবস্থিত খাল দুটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন-সমাবেশও করেছেন সংগঠন থেকে শুরু করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। এতে জেলা প্রশাসন তৎপর হয়। বরগুনা জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সহায়তায় উভয় পাড়ে ১৩৫ জন অবৈধ দখলদারের তালিকাও তৈরি করে।
আরও পড়ুন: সেতুর অভাবে ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) ২০১৮ সালে খালটির অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে। প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিব আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বরগুনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) খালটি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনা জেলা প্রশাসন ভূমি অফিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ডিসেম্বরে শেষ হয়। এরপর বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি পুনঃখননের প্রকল্প হাতে নেয়।
পাউবো কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারানী খালের পুনঃখনন কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ ও পটুয়াখালী জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে এ খাল খননের প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায়। বরাদ্দ এই কাজের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে ২৬ থেকে ৩০ মিটার বা ৮৫ থেকে ১০০ ফুট ও নিম্নস্তরের প্রস্থ ১২ মিটার বা ৩৯ দশমিক ৩৬ ফুট গভীরতা ১ দশমিক ৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বা ৫ ফুট থেকে ৬ দশমিক ৫০ ফুট।
আরও পড়ুন: ‘ভোজ্য তেলের আমদানির পয়সায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে’