সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে একুশে পদকপ্রাপ্ত ও বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম বসবাস করতেন। অথচ এই বিশিষ্ট জনের জমি প্রায় ৫০ বছর ধরে দখল করে রেখেছে এলাকার প্রভাবশালী দখলদার জোতদাররা।
বাউল সঙ্গীতাঙ্গনের জগতে সম্রাট হলেও জীবদ্দশায় জোতদারদের দাপটের কাছে শক্তি সম্পদে তিনি ছিলেন অনেকটাই অসহায়। তাদের সাথে পেরে উঠতে না পেরে অনেক দুঃখ ও বেদনা নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে তাকে।
‘জন্মগত ভূমিহীন একজন ছিল / পতিত বন্দোবস্তের জন্য দরখাস্ত দিল / তিন একর পাওয়ার জন্য দরখাস্ত ছিল/দুই একর এগার শতক দেওয়া তারে হলো / আইনমতে দশ কিস্তিতে সালামী দিয়েছে / এ পর্যন্ত এই জমির খাজনা দিতেছে / কাগজপত্রে বন্দোবস্ত পেয়েছে তো বটে / আজো বেদখল আছে জোতদারের দাপটে / সময় গেল টাকা পয়সা গেল যে বিস্তর/আশাতে আছে প্রায় একত্রিশ বৎসর /শক্তি স¤পদ না থাকাতে সবুর করে আছে/ ভুলিতে পারিবে কি যতদিন বাঁচে..’ দখলদারদের কাছ থেকে নিজের জমি উদ্ধার করতে না পেরে এভাবেই বাউল শাহ আব্দুল করিম তার লেখা গানে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন। যা ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ‘ভাটির চিঠি’ নামক গানের বইয়ে স্থান পেয়েছে। গানের কলিতে ৩১ বছর উল্লেখ থাকলেও তা এতোদিনে ৫০ বছরে গড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম: ভাটি বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক কীর্তিমান শিল্পী
বাউল শাহ আব্দুল করিমের সন্তান শাহ নূর জালাল বলেন, ‘আমার বাবার নামে রেকর্ডীয় জমি, দলিলপত্রও আছে। আমরা জমির খাজনা প্রদান করে আসছি। কিন্তু জমির ভোগদখল করতে পারছি না। আমার বাবা জীবিত থাকাবস্থায়ও অনেক চেষ্টা করেছেন, প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। আমিও প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমার অর্থ সম্পদ কিংবা পেশিশক্তি নেই। কার কাছে বিচার চাইব? বিচার চাওয়ার মতো জায়গাও আমাদের নেই। প্রশাসনকে জানিয়েছি, যদি প্রশাসন যাচাই করে আমাদের জমির বৈধতা পায় তাহলে ভোগদখল করার সুযোগ করে দেয়া হোক এটাই আমার দাবি।’
বাউল শাহ আব্দুল করিমের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ভূমির দখল প্রসঙ্গে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ধল ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক উপজেলা সহকারি কমিশনার'র (ভূমি) নিকট একটি প্রতিবেদন প্রদান করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দিরাই উপজেলার ১৩৪ নং জে এলস্থিত জালালপুর মৌজার ১ নং সরকারি খাস খতিয়ানের ১৮৯ নং এস এ দাগে ও ২৫৩ নং আর এস দাগে ১৭.৫০ একর পতিত খাস জমি রয়েছে। এখান থেকে ২.১১ একর ভূমি জেলা প্রশাসন ভূমিহীন হিসেবে শাহ আব্দুল করিমের নামে ২৫৫/৬৪-৬৫ নং চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়। যা ৩৫৯/৮৩-৮৪ নং নামজারি মূলে এস এ ৭৫ নং খতিয়ানে রেকর্ড করা হয়। উল্লেখিত দাগের ১৭.৫০ একর জমি বর্তমানে পতিত রয়েছে। কারোর দখলে নাই কিন্তু শাহ আব্দুল করিম জীবদ্দশায় যতবারই দখল করতে গিয়েছেন ততবারই তাড়ল গ্রামের বাসিন্দা খলিল চৌধুরী বাধা দিয়েছেন।
সরেজমিনে জালালপুর গিয়ে দেখা যায়, জালালপু