আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটিতে ঢাকা থেকে নৌপথে ভ্রমণকারী যাত্রীদের সংখ্যা ঈদুল ফিতরের তুলনায় বেশি হতে পারে। ফলে সম্ভাব্য ভিড়, অব্যবস্থাপনা এবং ব্যস্ত ভ্রমণের সময় বিপত্তি দেখা দিতে পারে।
বেসরকারি ও সরকারি সংস্থা এবং নদী পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষ উপকূলীয় জেলাগুলোতে যাতায়াত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) জানিয়েছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা অঞ্চলের সোয়া দুই লাখ মানুষ বৃহত্তর বরিশালসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় যাবেন।
কিন্তু এবার ঈদযাত্রার সময় মাত্র চারদিন হওয়ায় নৌযান চলাচলে চাপ বেশি পড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এসসিআরএফ সভাপতি আশীষ কুমার দে ইউএনবিকে বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে নৌপথে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু তারপরও বিশেষ করে ঈদের সময় যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা অপ্রতুল বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ঈদ যাত্রার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৪২, আহত ৩৩১
মাত্র চার দিনের মধ্যে ৯০টি লঞ্চ এত বিপুল সংখ্যক একমুখী যাত্রী বহন করতে প্রস্তুত, অতিরিক্ত ভিড় সহ অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের অস্বস্তির সম্ভাবনা বড় আকার ধারণ করেছে।
আগামী ১৭ জুন (সোমবার) সারাদেশে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
আগামী সপ্তাহের রবিবার, সোম ও মঙ্গলবার ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তার আগে এই সপ্তাহের বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস এবং শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
যারা নিজ শহরে প্রিয়জনদের সঙ্গে আসন্ন ঈদ উদযাপন করতে চান তারা বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৯৫ শতাংশ নৌযাত্রী ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট নদীবন্দর) ব্যবহার করবে।
ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ চলাচল করবে। এসব নৌপরিবহনের মধ্যে ঢাকা ছাড়বে ৯০টি, বিভিন্ন স্থান থেকে ৯০টি ঢাকায় আসবে।
কিন্তু চার দিনে ৯০টি লঞ্চ দিয়ে বিপুল সংখ্যক ওয়ানওয়ে যাত্রী নির্বিঘ্নে পরিবহন করা সম্ভব হবে না।
জাতীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ যেমন রয়েছে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে।
তাই সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে আরও সজাগ থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৫ জন নিহত, আহত ৪৫৪: আরএসএফ
বিআইডব্লিউটিএ'র যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও ট্রাফিক) আলমগীর কবির বলেন, ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভ্রমণকারীরা যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গন্তব্যে যাওয়ার পথে সবগুলো লঞ্চ ঢাকা নদী বন্দরের পাশাপাশি নিকটবর্তী বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত। তাই যাত্রার সময় কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের (লঞ্চ) জানানো হবে।
ঢাকা নদীবন্দরের দায়িত্বে থাকা আলমগীর কবির জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিআইডব্লিউটিসির বিশেষ স্টিমার সার্ভিস চালু হবে।
এসব স্টিমার সার্ভিস ঢাকা নদীবন্দর থেকে ১৩, ১৬ ও ২০ জুন মোরেলগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং ১৪, ১৮ ও ২২ জুন মোরেলগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ যাত্রীবাহী পরিবহন সমিতির (বিআইডব্লিউটিএ) সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
এবারের ঈদযাত্রায় সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের লঞ্চগুলো বর্তমান আবহাওয়া অনুযায়ী চলতে সক্ষম।
এছাড়া আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়মিত আবহাওয়ার সতর্কতা পাচ্ছি। ঈদে ঘরমুখো মানুষ ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: ‘ঈদ যাত্রায় ভাড়া-গতি-যাত্রী অতিরিক্ত হলে এক লাখ টাকা জরিমানা’