শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এ বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া, জেএসসি, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এ পরীক্ষার ফল তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান এবং ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে সদস্য করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
কিন্তু ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিতা মনে করেন, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত গ্রেড দিয়ে শিক্ষার্থীর এইচএসসির সক্ষমতা নির্ধারণ যথাযথ পদ্ধতি হতে পারে না, যদিও এটি প্রচুর অপ্রস্তুত শিক্ষার্থীর সহায়ক হতে পারে।
সে বলে, ‘এ বছর সব পরীক্ষার্থী পাস করবে তবে তাদের গ্রেড এক হবে না। আমি আমার অনেক সহপাঠীকে জানি, যারা জেএসসি বা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি তবে তারা এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, সেই সুযোগটি এখন আর নেই।’
অন্যদিকে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থী মেহেদী বলেন, এ বছরের জন্য পদ্ধতটি আদর্শ কারণ কোভিড-১৯ মহামারি এখনও সবার জন্য হুমকি।
সে বলে, ‘এ এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল কিছু শিক্ষার্থীর প্রতি অন্যায় বলে মনে হতে পারে, তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্তটি মূল্যায়নের সেরা পদ্ধতি হতে পারে। সুতরাং এ নিয়ে আমি অভিযোগ করতে পারি না।’
বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী তার এ মতামতের সাথে এক নাও হতে পারে। এ রকমই একজন কুমিল্লার একটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাবিলা জামান বলেন, জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এইচএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের মোট নম্বরের একটি অংশ ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে, তবে এ বছর এটি কীভাবে কার্যকর হবে তা কারও ধারণায় নেই। আমাদের মতো অনেকে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।’
একইভাবে, এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মা মনোয়ারা বেগম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন্ন ভর্তি মৌসুম সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষার স্কোরগুলোকে কীভাবে নির্ণয় করা হবে তা নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।’
খুলনার এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা হালিম আকন্দ অবশ্য সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন এবং যুক্তি দিয়ে বলেন, বাচ্চাদের ক্ষতি করার চেয়ে অটো-প্রমোশনই ভালো।
তিনি বলেন, ‘একমাস ধরে পরীক্ষা কেন্দ্র সংক্রমণমুক্ত রাখা কার্যত অসম্ভব। যাই হোক না কেন আমরা আমাদের বাচ্চাদের জীবনকে বিপদের মধ্যে ফেলতে পারি না।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের পক্ষে এবং বিপক্ষে নানা মত রয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগ নতুন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত প্রকাশ করছেন। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অসন্তুষ্টও হয়েছেন। বেশির ভাগের ক্ষেত্রে এটি হয়েছে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার কারণে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী প্রভাত মনে করেন, এইচএসসির গ্রেডিংয়ের কারণে এ বছর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রভাব তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না।
তিনি বলেন, ‘এটি সবার জন্যই এক প্রতিকূল পরিস্থিতি। অনেক শিক্ষার্থী এবং এমনকি শিক্ষকরা সিদ্ধান্তটি পছন্দ নাও করতে পারেন, তবে কোভিড-১৯ হুমকির কথা বিবেচনা করে এটি সম্ভবত সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত সমাধান।’
দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোকে ভর্তি পরীক্ষা মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি বের করতে হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সাভারের মোফাজ্জল-মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজের শতাব্দী রায় নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফল প্রকাশের সরকারি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ৭ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ফল প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এতে নোটিশদাতাসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা না নেয়া গেলে নিজ নিজ কলেজের নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন চাওয়া হয়েছে।
এ বছর ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল।