সরকারি নথি অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আনুমানিক ৪৩১৮ বিলিয়ন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৯২৭.৬ বিলিয়ন টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। যেখানে বর্তমান ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা হলো ৩৭৮০ বিলিয়ন টাকা।
এটা আশা করা হচ্ছে যে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ এবং রাজস্ব খাত সংস্কারে নেয়া কর্মসূচির বাস্তবায়ন মধ্য-মেয়াদি সময়কালে সরকারের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাহায্য করবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮.৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্বের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ৩৭৭৮.১ বিলিয়ন টাকা, যা পরে নেমে আসে ৩৪৮০.৭ বিলিয়ন টাকায়।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আহরণ বাড়াতে হবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রকৃত লক্ষ্য ২৫১৮.৮ বিলিয়ন টাকার চেয়ে ২২.৫ শতাংশ বেশি।
নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইলেক্ট্রনিক আর্থিক ডিভাইস বসানো, নতুন ভ্যাট আইন এবং নতুন শুল্ক আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্য-মেয়াদ ভিত্তিতে রাজস্ব আদায় জোরদার হবে।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আহরণ করবে ৩৭৫৫.৪ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ১২৯৭.২ বিলিয়ন টাকা আসবে আয় ও মুনাফার কর থেকে এবং ৪১৫.৭ বিলিয়ন টাকা আসবে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে। এছাড়া ১৯৯৯.৫ বিলিয়ন টাকা আসবে পরিপূরক শুল্ক থেকে।
এনবিআর বহির্ভূত আয় হবে ১৭৯.২ বিলিয়ন টাকা এবং আয়কর বহির্ভূত আয় হবে ৩৮৩.৪ বিলিয়ন টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের জন্য মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২৬৮.২ বিলিয়ন টাকা, যেখানে ১৪৭৬.৭ বিলিয়ন টাকা আসবে আয় ও মুনাফার কর থেকে এবং ৪৭৭.৪ বিলিয়ন টাকা আসবে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে। এছাড়া ২২৬৫.৬ বিলিয়ন টাকা আসবে পরিপূরক শুল্ক থেকে।
এনবিআর বহির্ভূত আয় হবে ২২২.৫ বিলিয়ন টাকা এবং আয়কর বহির্ভূত আয় হবে ৪৩৬.৯ বিলিয়ন টাকা।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সূচক স্বাভাবিক থাকলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব কোভিড-১৯ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে...বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এবং রাজস্ব সংগ্রহ (প্রবণতা) বজায় রাখার জন্য কাজ করছি। অন্যান্য অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সূচক শক্তিশালী থাকলে আমরা রাজস্ব আহরণে ব্যর্থ হব না।’
জুলাই মাসে এবং আগস্টের প্রথমার্ধে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবণতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক আরও ভালো করতে থাকলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে।
দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং উৎপাদন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে সরকার ১ লাখ ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা মোট জিডিপির ৩.৭ শতাংশ।
রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, কৃষি, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাত সংস্থাগুলোকে কার্যকরী মূলধন সুবিধা প্রদানের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোগগুলোর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সুবিধাগুলো সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এছাড়া রপ্তনিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি, কৃষি ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি, কৃষি উন্নয়নে ৫ হাজার কোটি, স্বল্প আয়ের পেশাদার কৃষক এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্যও তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
যুবক ও প্রবাসী যারা মহামারি পরিস্থিতির কারণে চাকরি হারিয়েছেন, তাদের সহায়তার লক্ষ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের জন্য মোট ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য মাত্র ৪ শতাংশ সুদে অতিরিক্ত আরও ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং মহামারির কারণে দেশব্যাপী শাটডাউনের ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার ব্যাংক সুদ মওকুফ করবে সরকার।