নতুন লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের জন্য অপেক্ষা না করে আগের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন থেকে বিকল্প পথেই পাইপ লাইনে অক্সিজেন সরবরাহ করে আরও ২০টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত করা হয়েছে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে। ঈদুল ফিতরের পরই এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড কাম আইসিইউ বিভাগের জন্য লিন্ডে অক্সিজেন কোম্পানির স্থাপন করা সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টকে পাঁচ ইউনিট থেকে ১০ ইউনিটে উন্নীত করেই করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলো। এর ফলে এ হাসপাতালে আগে থেকে থাকা ১০টি আইসিইউ বেডের পাশাপাশি আরও ২০টি বেড সংযোজন হবে। সেই সাথে নিচতলা ও দোতলা মিলিয়ে এখন থেকে এটি হবে পূর্ণাঙ্গ ১০০ বেডের করোনা হাসপাতাল।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, খুমেক হাসপাতালের জন্য পৃথক আইসিইউ ভবন নির্মাণ করে চালুর আগেই করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় প্রথমে এখানে ফ্লু কর্নার স্থাপন করে করোনার সন্দেহের রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। গত বছর যখন খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালে অস্থায়ী ভিত্তিতে করোনা হাসপাতাল স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল তখন খুমেক হাসপাতালের আইসিইউ ভবনটি ফ্লু কর্নার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেখানে করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। এরপর করোনার প্রভাব কমলে এ বছরের শুরু থেকে ডায়াবেটিক হাসপাতাল ছেড়ে দিয়ে এখানেই করোনার রোগীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। একই সাথে দুটি জোন করে ইয়োলো জোনে করোনার সন্দেহের রোগীদের এবং রেড জোনে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের ভর্তি করা হয়। রেড জোনে ১০টি আইসিইউ বেডও স্থাপন করা হয়। অন্যান্য সাধারণ বেডেও হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করার পাশাপাশি মুমূর্ষ রোগীদের জন্য হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানোলার সাপোর্টও দেয়া হয়। সেই সাথে সিলিন্ডার অক্সিজেন সরবরাহও স্বাভাবিক রাখা হয়। কিন্তু ওই ভবনের দোতলায় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পাইপ লাইন না থাকায় গত কয়েকদিন ধরে লাইন স্থাপন করা হয়।
বৃহস্পতিবার অক্সিজেন লাইনের কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বৈদ্যুতিক কাজসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম এবং জনবলের রোস্টার করে ঈদের পরই এর কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ১০০ বেডের করোনা হাসপাতালে এখন থেকে রেড জোনে ৭০টি এবং ইয়োলো জোনে ৩০টি বেড থাকবে। রেড জোনের ৭০ বেডের মধ্যে আবার ২০টি থাকবে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্চাকেন্দ্র), ১০টি এইচডিইউ (উচ্চমাত্রিক নির্ভরকেন্দ্র) এবং ৪০টি সাধারণ (করোনার রোগীদের জন্য উপযুক্ত) বেড।
আরও পড়ুন: করোনা উপেক্ষা করে খুলনায় জমজমাট ঈদ কেনাকাটা
সরেজমিনে করোনা হাসপাতালের দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, আইসিইউ জোন-২, কোভিড জোন, ইয়োলো জোন, নমুনা সংগ্রহ কক্ষ, ডাক্তার, নার্স সকলের জন্য পৃথক জোন করা হয়েছে। কোভিড জোনের জন্য বেডগুলোও প্রস্তুত। প্রতিটি বেডের সাথে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য লাইনও টানা হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজ শেষ করে এখন ওই অংশের কার্যক্রম শুরু করতে আর সপ্তাহখানেক লাগতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। এজন্য আগামী ১৬ মে দিন নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ এগিয়ে যাচ্ছেন বলে খুমেক হাসপাতালের আরএমও জানিয়েছেন।
খুমেক হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী ও খুমেক’র উপাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার অস্থায়ী গ্রিড হাসপাতালে সরকারি অর্থায়নে সরবরাহকৃত মালামাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের অংশ হিসেবে খুলনায়ও একটি লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য ট্যাংকসহ আনুসঙ্গিক মালামাল দেয়া হয়। স্পেক্ট্রা অক্সিজেন কোম্পানির ওই প্লান্টটি বসানোর দায়িত্ব নিয়েছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এইচইডি। কিন্তু সেটি স্থাপন সংক্রান্ত জটিলতায় প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হতে চললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেজন্য বসে থাকেনি। বিকল্প পথে অক্সিজেন সরবাহ করে করোনা রোগীদের সেবার জন্য করোনা ইউনিটটি আরও বৃহৎ পরিসরে প্রস্তুত করা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ বলেন, আইসিইউ ভবনটি আপাতত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ভবিষ্যতে যখন এটি আইসিইউ হিসেবেই ব্যবহৃত হবে তখন যাতে খুব বেশি একটা কাজের প্রয়োজন না হয় সেভাবেই এটিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। অর্থাৎ করোনার প্রভাব কমলে অথবা পৃথক করোনা হাসপাতাল করা হলে এ ভবনটি আইসিইউ ভবন হিসেবেই পরিচিতি পাবে। তাছাড়া এখন বিকল্প লাইনে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলেও স্পেক্ট্রা অক্সিজেন কোম্পানির লিকুইড প্লান্ট বসানোর পর এখানে স্বতন্ত্র অক্সিজেন প্লান্টের মাধ্যমেই অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে।