পেনশন, প্রোভিশন, সুরক্ষা এবং অবকাঠামোর মতো সমন্বিত প্রয়োজনে কোনো দেশের রাষ্ট্রের করা ব্যয়কে সরকারি ব্যয় বলা হয়। এই জাতীয় ব্যয় একটি দেশের সংকট থেকে বাঁচার মূল বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মহামারির বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সম্ভবত বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারবে।
ইউএনবির হাতে পাওয়া সরকারি নথির অনুলিপি অনুযায়ী, আগামী দুই অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের বৃদ্ধি হবে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নের পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কর-জিডিপি অনুপাত জোরদারের নজর এনবিআরের
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২১ অর্থবছরে ৬.৮ শতাংশ হবে: এডিবি
গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের সরকারি ব্যয় জিডিপির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ ধরা হয়েছে এবং এটি অপরিবর্তিত রাখা আছে।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় যথাক্রমে জিডিপির ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল।
নথিতে বলা হয়, মধ্য মেয়াদে সরকারের লক্ষ্য হলো সহনীয় অবস্থা বজায় রেখে বাজেট ঘাটতি সীমাবদ্ধ করা। পরে সরকারের ব্যয়ের মূল লক্ষ্য হবে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ‘কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করা’।
সরকারি নথিতে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ১৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১৫-১৬ সালে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৬-১৭ সালে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৭-১৮ সালে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ সালে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল। গত অর্থবছরে করোনা মহামারির কারণে যখন পুরো অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮ দশমিক ১ শতাংশ (সংশোধিত)।
বর্তমান ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির হার ১৩ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে দেশের জিডিপির প্রায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমান ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
প্যাকেজের মধ্যে রপ্তানি শিল্প, শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা তহবিল, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কার্যনির্ভর মূলধন, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ঋণের সুবিধা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ঋণ, ব্যবসায়ের জন্য সুদ, স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য স্কিম এবং বীমা ভাতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার দেশের অর্থনীতিতে কোভিডের সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে চারটি কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক প্যাকেজ চালু, সামাজিক সুরক্ষা খাত কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং অর্থ সরবরাহ বাড়ানো।
আরও পড়ুন: দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ভবিষ্যদ্বাণী অসামঞ্জস্যপূর্ণ: অর্থমন্ত্রী
করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় অর্থনীতি সচল আছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনা ও আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান গদখালীর ফুল চাষিরা
সরকারি ব্যয়গুলোতে কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল এবং বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসবহুল ব্যয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়। দেশের জিডিপি অনুপাতের মাত্র ৩৪ শতাংশ হওয়ায় সরকার সামষ্টিক অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত না করে অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য ঘাটতি অর্থায়নের সন্ধান করে।
ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদের হারে কিছু ঋণের সুবিধা চালু করা হয়েছিল। এই ঋণের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে পুনরুজ্জীবিত করা, কর্মীদের নিজ নিজ চাকরিতে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা এবং প্রতিযোগিতা অক্ষুণ্ন করা। এটি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য দৈনিক মজুরির সামাজিক নিরাপত্তা খাত কর্মসূচির আওতাভুক্ত ছিল।
অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) এবং রেপো হারকে হ্রাস করেছে যা চাহিদা অনুযায়ী আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। সিআরআর হচ্ছে ব্যাংকের মোট আমানত হিসাবে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ শতাংশ, আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো রিজার্ভ ব্যাংক থেকে যে সুদে স্বল্প মেয়াদি ঋণ নেয় সেটা হলো রেপো হার।