খুলনা বিভাগে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ উদঘাটন করেছে পুলিশ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনায় প্রতি মাসে গড়ে দুর্ঘটনা হয়েছে একশ’র বেশি এবং এতে নিহত হয়েছে গড়ে ১৩ জন।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হল সড়কে যানবাহন চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করা। এছাড়া সড়কগুলোতে কম গতি সম্পন্ন গাড়ি চলাচল, তিন চাকার নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল এবং পথচারীদের অন্য মনষ্ক হয়ে চলাচলও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে জনসচেনতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের আরও বেশি সচেতনতার কারণে নিয়ন্ত্রণ হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে এক হাজার ৪৮৮টি। যা গড়ে প্রতি মাসে ১২৪টি। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬২ জন এবং আহত দুই হাজার ২০১ জন।
কেএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ জানায়, খুলনা মেট্রো এলাকায় গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৮টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে ১৯ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ আরোহী নিহত
খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ২৩টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়িগুলো হলো ট্রাক, বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, বাই সাইকেল, রিকশা, ভ্যান।
খুলনা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বলেন, করোনার সময় অনেক মালিক গাড়ি ফিটনেস আপডেট করতে পারিনি। বর্তমান সরকার জরিমানা ছাড়া করোনাকালীন সময়ে ফিটনেস করতে পারিনা। এতে জরিমানা ছাড়া ফিটনেস শুরু হয়েছে। প্রতিদিন অনেক গাড়ি ফিটনেস আপডেট করতে আসছেন। আমরা ৪৬টি পয়েন্ট যাচাই করেই ফিটনেস আপডেট করছি। এছাড়া পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি আটকের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। খুলনায় প্রায় ১০ ভাগ গাড়ির ফিটনেস আপডেট নেই। প্রত্যেক মালিককে চিঠির মাধ্যমে ফিটনেস আপডেট করার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার তাজুল ইসলাম জানান, সড়কে চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া ক্রটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল, হাইওয়েতে চলাচলের উপযোগী নয় এমন গাড়ি চলাচল করা, চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণে ঘাটতি থাকা, পথচারীরা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। এগুলোর বিষয়ে যথাপযোগী ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান জানান, সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিরোধের বিষয়ে বিট পুলিশিং কার্যক্রমে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সড়কে মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহার করা না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। থ্রি হুইলার, ইজিবাইক এগুলোর বিষয়ে চালকদের আরও সতর্ক করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও সচেতন হতে হবে।