খুলনা-মোংলা রেললাইন স্থাপনের পর বেশ কিছু এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমান সড়ক থেকে প্রায় ১০-১২ ফুট উঁচু দিয়ে রেললাইন যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে সড়কগুলো দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এজন্য খুলনা ও বাগেরহাটের নয়টি স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে প্রকল্প সংশোধন করে আন্ডারপাস নির্মাণের অংশটি সংযোজন করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে আন্ডারপাস নির্মাণ শুরু হবে।
খুলনার ভেতরের আন্ডারপাসের স্থানগুলো হচ্ছে-খুলনার বিল ডাকাতিয়ার লতাপাহাড় সড়কে, আড়ংঘাটা পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কের ওপর, লবণচরা থানার পেছনে প্রস্তাবিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবং রূপসার জাবুসা বাজার মোড়ে।
বাগেরহাটের ভেতরে কাটাখালি স্টেশনের আগে বালিয়া ভট্টখামার এলাকা, চুলকাঠি বাজারের পাশে পিলজঙ্গ এলাকায়, মহিষ খামারের পাশে, বাঘার কবিরাজ বাড়ি এলাকায় এবং দিগরাজ বাজার থেকে কিছুটা সামনে অন্য পাঁচটি আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প থেকে জানা গেছে, খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দৈর্ঘ্য হবে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। রেললাইন রূপসা নদীর ওপর দিয়ে যাবে। এ জন্য রূপসা সড়ক সেতুর অদূরে রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লোকবল সংকট : বন্ধ হলো নাটোরের আজিমনগর রেলস্টেশন
সূত্রটি জানায়, খুলনা থেকে মোংলার সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। জাতীয় মহাসড়ক (এন-৭) এর পাশ দিয়েই সমান্তরালভাবেই রেললাইন যাচ্ছে। নতুন রেললাইন যেই এলাকায় বসছে, এর মাঝে অসংখ্য গ্রামীণ সড়ক, বাজার এবং মহাসড়ক রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভূমি থেকে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় রেললাইন বসছে। এ জন্য রেললাইন এলাকায় ১০৬টি কালভার্ট ও ৩১টি মাঝারি আকৃতির সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে কিছু এলাকায় রেললাইন থেকে আগের সড়কগুলো ৪-৫ ফুট নিচু থেকে গেছে। কয়েকটি জায়গায় সড়ক থেকে রেললাইনের উচ্চতা ১০ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। এতে রেললাইন অতিক্রম করতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আন্ডারপাসগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, রেললাইন থেকে সড়ক ১০-১২ ফুট নিচে হওয়া এবং ভারী যানবাহন চলাচল করায় এই নয়টি স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। সংশোধিত প্রকল্পে বিষয়টি অনুমোদনের পর মাটি পরীক্ষা হয়েছে। নকশা তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের শুরুতেই আন্ডারপাসের কাজ শুরু হবে। আপাতত ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নকশা তৈরির কাজ শেষ হলে পুরো ব্যয় জানা যাবে।
তিনি বলেন, কয়েকটি এলাকায় আন্ডারপাস বা ওভারপাসের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু প্রকৌশলীরা স্থানগুলো পরিদর্শন করে ওই সব এলাকায় ওভারপাস বা আন্ডারপাস সম্ভব নয় বলে মতামত দিয়েছেন। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যূনতম ৮-১০ ফুট উচ্চতা না থাকলে রেললাইন মেলানো যাবে না। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। প্রস্তাবিত এলাকায় উচ্চতা কম।
আরও পড়ুন: রেল খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী তুরস্ক
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর খুলনা-মোংলা রেল (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদন পাওয়া খুলনা-মোংলা ৬৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রথম ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। প্রথম দফা প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় বর্তমান ব্যয় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।