রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের কাজ পুরোদমে চলছে। চলতি বছরে ডিসেম্বরের মধ্যেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে রেল যোগাযোগ চালু হবে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার জন্য তারা কাজ করছেন। ‘আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। আর কোনো কারণে জুনে কাজ শেষ না হলে আরও এক থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে। তারপরও আমরা এ বছরের মধ্যেই ট্রেনে করে কক্সবাজার যেতে পারব।'
মন্ত্রী বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি ২০ শতাংশ এই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে যাত্রা 'আনন্দদায়ক ও আরামদায়ক' হবে।
এছাড়া এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেনে চড়ে সহজে কক্সবাজারে আসবেন পর্যটকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তেমনি সহজভাবে দেশের সব প্রান্তে যাবেন কক্সবাজারবাসীও। সহজ হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেয়া। এতে বাড়বে কক্সবাজারে পর্যটক স্রোত। 'ভ্রমণকারীরা খুব সহজেই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন,' বলেও জানান বলেন।
প্রকল্প অনুযায়ী সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার সদরসহ ১০০ কিলোমিটার রেলপথে মোট আটটি স্টেশন রয়েছে।
আরও পড়ুন: সব যানবাহনে ভাড়া বাড়লেও ট্রেনের ভাড়া বাড়েনি: রেলমন্ত্রী
পর্যবেক্ষকদের মতে, রেলপথ সচল হলে সবদিক দিয়ে ঘুরে যাবে কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প থেকে জানা যায়, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদরসহ স্টেশন থাকছে আটটি। এজন্য সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু।
এছাড়া রেলপথে তৈরি হয়েছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ১০০ কিলোমিটার রেললাইনে এরইমধ্যে ৫০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। বেশির ভাগ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো আগামী কয়েক মাসেই শেষ হবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে, আমরা চেষ্টা করছি ২০২৩ সালের জুন-অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে। সেইসঙ্গে রেলস্টেশনগুলোর নির্মাণকাজও চলমান আছে।
আরও পড়ুন: চিলাহাটি-মঙ্গলা রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে জুনে: রেলমন্ত্রী
তিনি আরও জানান, কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এর পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: জুনের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু হবে: রেলমন্ত্রী