অনেক কৃষকই ক্ষেত থেকে আলু তুলে সরাসরি হিমাগারে পাঠাচ্ছেন। দাম যখন বাড়বে, তখন বিক্রি করবেন বলে জানালেন বেশিরভাগ কৃষক।
সরেজমিনে ফসলের মাঠে গিয়ে ইউএনবির এই প্রতিনিধি দেখেন, ফরিয়ারা মাঠ থেকে প্রতি মণ আলু ৪৮০ টাকায় কিনতে চায় যা আলু চাষিরা মানতে নারাজ।
আরও পড়ুন:যশোরে বিপাকে আলু চাষিরা
জেলা, উপজেলা ও গ্রামের হাট-বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭/১৮ টাকা করে। ফসলের মাঠ থেকে ফরিয়ারা প্রতি কেজি ১২ টাকায় কিনতে চায় এবং অনেক কৃষক বিক্রিও করছেন। ফরিয়ারাও কিনছেন। সবারই এক কথা- আলুর দাম নেই, দাম কম, তাই আলু চাষিরা হতাশ, তাদের মুখে হাসি নেই।
কয়েক মাস আগে করোনাকালে আলুর দাম ৫০/৫৫ টাকা কেজি হওয়ায় অনেক চাষী আলু উৎপাদনে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু এখন তারা হতাশ। এসব কথা বস্তায় আলু ভরার সময় বলছিলেন চাঁদপুর সদরের সেনগাঁও এর কৃষক রাজন ধর (৩২), কুমারডুগি গ্রামের আবুল বাশার খান (৬৫), আবুল হোসেন খান (৪৫) ও খোকন গাজী (৬০) এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের ফারুক বেপারি (৫০)।
রাজন জানান, তিনি ১৬/১৭ গণ্ডায় আলু চাষ করেছেন। প্রতি গণ্ডায় ১৫ মণ আলু উৎপাদন হয়েছে।
এছাড়া বাশার ৫ গণ্ডায় আলু চাষ করে পেয়েছেন ৭৫ মণ আলু , আবুল হোসেন ১০ গণ্ডায় পেয়েছেন ১৫০ মণ আলু।
খোকন গাজী জানান, তিনি ২৪ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছেন। এবার ফলন ভালো হয়েছে। আলুর আকৃতিও ভালো হয়েছে, তাই সবাই খুশী।
আরও পড়ুন:শরীয়তপুরে টানা বৃষ্টিতে আলু চাষিদের মাথায় হাত
সদরের কালিভাংতি গ্রামের জাহাংগীর গাজী, হান্নান গাজী, রাজ্জাক ভুইয়া, দামোদরদী গ্রামের মাসুম বিল্লাহ ও জিন্নাহ এবং বিষ্ণপুর গ্রামের রাজ্জাক ভুইয়া জানান, তারা আলুর বাম্পার ফলনে খুব খুশি এবং কিছুদিন পর আলু তুলবেন।
তারা আরও জানান, তারা সবাই আলু তুলে কোল্ড স্টোরেজে রাখবেন।
কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের বুধুন্ডা গ্রামের শহীদুল্লাহ ভুইয়া (৫৮), মোশারেফ হোসেন (৪৫), চানপাড়া গ্রামের কবির হোসেন (৪৫) ও কামাল হোসেন (৪২) জানান, তারাও কিছুদিন পরে আলু তুলবেন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার পাটন গ্রামের শফিকুল ইসলাম (৫০), আশ্বিনপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৪০) ও মসুন্ডা গ্রামের মজিবুর রহমানেরও (৫৫) একই কথা।
অনেকেই আলু তুলছেন আবার অনেকেই কয়েকদিন পর আলু তুলবেন কারণ তারাও শংকায় আছেন আলুর প্রকৃত দাম পাবেন কি না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কৃষিবিদ নরেশ চন্দ্র দাস ও আ. মান্নান জানান, এবার জেলায় আলুর টাগের্ট ছিল ৮ হাজার হেক্টর। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ছিয়াত্তর হাজার মে. টন। এবার দাম বেশি পাবে এ আশায় কৃষকরা অনেক বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। এখন হতাশ না হয়ে কোল্ড স্টোরেজে রেখে পরে দাম বাড়লে আলু বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।
আট উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় আলু চাষ হয়েছে দশ হাজার পঁয়ত্রিশ হেক্টর জমিতে। মোট আলু উৎপাদনের পরিমাণ হচ্ছে দুই লাখ বিশ হাজার মে. টন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. জালালউদ্দীন জানান, অনুকূল আবহাওয়া, কম শীত, শৈত্যপ্রবাহ না থাকা, কোন পোকার আক্রমণ বা রোগ বালাই না থাকা, বৃষ্টি না থাকায় এবং মাঠ পর্যায়ের কমর্কর্তারা উঠানবৈঠক করে চাষীদের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
চাঁদপুর সদরে ৮টি, হাজীগঞ্জে ২টি, মতলব দক্ষিণে ৩টি ও কচুয়ায় ১টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। যেখানে আলু সংরক্ষণ করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।