শুল্ক সুবিধা বা ইনসেনটিভ দিয়ে বেসরকারি খাতকে জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার তাগিদ দিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
কপ২৮ জলবায়ু সম্মলেনে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলো নিজেরা বিনিয়োগ না করে বেসরকারি খাতের উপর দায় চাপাচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি খাত জলবায়ু সহনশীল খাতে বিনিয়োগে আগহ দেখাচ্ছে না। তাই জলবায়ু খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে শুল্ক সুবিধা বা ইনসেনটিভ দেওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নেগোসিয়েশন টিমের সদস্য ড. রেজাউল করিম ইউএনবিকে বলেন, কার্বন দূষণকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটা হচ্ছে না। সরকারি রাজস্ব বাড়াতে হলে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা করতে হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বজনীন আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থার আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর
তিনি আরও বলেন, দূষণের উপর কর ধার্য করতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তাদের শুল্ক সুবিধা দিতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বাড়াবে অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টিমের অপর সদস্য ড. আইনুন নিশাত ইউএনবিকে বলেন, জলবায়ু অর্থায়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বৈশ্বিক নেতাদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তাদের জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনে বিনিয়োগে বাধ্য করতে হবে। ব্যাংকিং খাত এক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, কপ প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেই বলেছেন, ফসিল ফুয়েল কোম্পানিগুলো চাইলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন দূষণ কমাতে পারে। এই বিষয় এবার জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর দেশগুলো জোরেশোরে তুলে এনেছে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতি তহবিল যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু জলবায়ু খাতে অর্থায়ন পাওয়ার চ্যালেঞ্জ আরও বড় হচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতি তহবিল কার্যকর হওয়ার পর সম্মেলনের সবচেয়ে কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়। ফলে আশা করা হয়েছিল, সম্মেলনের অন্যান্য কাজগুলোও সহজ হয়ে যাবে।
কিন্তু কার্বন নির্গমন কমানো এবং উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের আলোচনায় এসে এই আলোচনা বাধার সম্মুখীন হয়। বরং কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে সম্মেলন সভাপতির একটি বক্তব্য ঘিরে আলোচনা আরও জটিল আকার ধারণ করে।
এ বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও এলডিসি গ্রুপের ক্ষয়ক্ষতি সমন্বয়কারী এম হাফিজুল ইসলাম খান ইউএনবিকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের কার্যক্রম শুরু হতে কমপক্ষে আরও আট মাস সময় দরকার হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রথম সভায় বসবে এই তহবিল পরিচালনায় গঠিত পরিচালনা পরিষদ।
তিনি বলেন, আর এই পরিষদই ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকট: অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রণয়নের আহ্বান
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রস্তুতির অভাবে বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহার করতে পারছে না। তাই শুরু থেকে ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য দক্ষ জনবল ও কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করতে হবে।
এদিকে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মনজুরুল হান্নান খান ইউএনবিকে বলেছেন, কপ-২৮ এখন পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন দূষণ কমিয়ে আরও বেশি সময় ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে কপ প্রেসিডেন্টসহ জ্বালানিসমৃদ্ধ দেশগুলোর অবস্থান আরও জোরালো হয়েছে।
তিনি আরও বরেন, এর মাঝে হয়তো ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার তিনগুন ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার দ্বিগুন করার লক্ষ্য নেওয়া হলেও তা অর্জিত হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি একুশ শতকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে ধরে রাখা যাবে এমনটি আর বিশ্বাস হচ্ছে না।
দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ (কপ-২৮) শুরু হয়েছে। তা চলবে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। ১৩ দিন ব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
কপ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞসহ সব শ্রেণির প্রতিনিধি বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন এবং নিজ দেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আরও পড়ুন: ‘ভেক্টর বাহিত রোগ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী’