শহরের নিরালা, শের-এ-বাংলা রোড, বিকে রায় রোড, নর্থ খাল ব্যাংক রোড, খান জাহান আলী রোড, মুজগুন্নী, খালিশপুর ও দৌলতপুর এলাকার গাছগুলোতে ঘুরে সবচেয়ে বেশি আমের মুকুল দেখা গেছে।
খুলনা সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র আব্দুল করিম বলেন, ‘বছরের এ সময়ের প্রকৃতি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে। নগরজুড়ে হরেক রকমের ফুল ফুটে। আমের মুকুল বাতাসে দোল খায়। দেখলেই যেন মনটা ভালো হয়ে যায়।’
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে বাতাসে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ
এসব মুকুল অনেকের মনে শৈশবের স্মৃতি নাড়িয়ে দেয়। নিয়ে যায় ছোটবেলার সেই হারানো দিনগুলোর কাছে।
টুটপাড়া পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব শেখ সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সাতক্ষীরায় আমার বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমের সাথে বড় হওয়া। ঝড়ঝাপটা হলে বন্ধুরা মিলে ব্যাগ হাতে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটতাম আম বাগানে। এখন আর বাড়ি যাওয়া হয় না। আমের মুকুল দেখলে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো ফিরে আসে।’
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই আবহাওয়াগত ও আগাম জাতের কারণেই মূলত আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: আমের আগাম মুকুল উঁকি দিচ্ছে
তারা জানান, প্রতি বছরই কিছু আমগাছে আগাম মুকুল আসে। এবারও আসতে শুরু করেছে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে না পড়লে এসব গাছে আগাম ফলন পাওয়া যায়। আর আবহাওয়া বৈরী হলে ফলন মেলে না। তবে নিয়ম মেনে শেষ মাঘে যেসব গাছে মুকুল আসবে সেসব গাছে মুকুল স্থায়ী হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, বেশ কিছু এলাকায় আগাম মুকুলে ছেয়ে গেছে আমগাছ। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে ছোট ছোট আম বেরিয়ে এসেছে। আবহাওয়া পরিবর্তন অর্থাৎ যে আবহাওয়াটা মুকুল হওয়ার জন্য দরকার সেটা আগেই পেয়ে যাওয়ায় আগাম মুকুল এসেছে। এছাড়া আগাম জাতের গাছে আগাম মুকুল আসে।
তিনি বলেন, ডুমুরিয়ায় ছোট বড় মিলে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির আম বাগানে বিভিন্ন প্রকারের গাছ রয়েছে। দিন দিন লাভের কারণে বাগান ও আমগাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: ভোর হলেই জমে উঠে ফুলের রাজধানী গদখালীর ফুল বাজার
জেলার আম চাষি ও বাগান মালিকরা জানান, ভালো ফলনের আশায় বাগানের গাছগুলোর যত্ন নিতে শুরু করেছেন, বর্তমানে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা।
দৌলতপুর এলাকার আমচাষি মো. শফিকুল সরদার বলেন, ‘পুরোপুরি সকল গাছে মুকুল আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যেই মুকুল আসবে। তবে তীব্র শীতেও যেসব গাছে মুকুল এসেছে, তা থেকে ফল হবে কি না এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
শহরের বাইরে পাইকগাছা, রূপসা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা, ফুলতলা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলায় শোভা ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। শীতের হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁক গলে দোল খাওয়া সোনাঝরা মুকুল মন ভালো করে দেয় সবার, মানুষের মধ্যে বিলায় অন্য রকম আনন্দ।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়াগত ও জাতের কারণেই মূলত আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। প্রায় ২৫ শতাংশ আমগাছে মুকুল এসেছে। আগামী মাসের মধ্যে সব গাছে মটরদানার মতো আমের গুটি চলে আসবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে বাগান মালিক ও চাষিরা এবার লাভবান হবেন।’
আরও পড়ুন: বুড়িচংয়ে ৩ রঙয়ের পদ্মফুলের সমারোহ
তিনি জানান, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা রয়েছে, তবে এতে মুকুলের কোনো ক্ষতি হবে না। মূলত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে মুকুলের ক্ষতি হয়।
হাফিজুর রহমান জানান যে জেলায় বিশেষ করে নিয়মিত জাত আম্রপালি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাত, আশ্বিনা ও হাইব্রিড জাতের গাছ বেশি লাগানো হচ্ছে।