যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আয়োজনে জলবায়ু বিষয়ক ভার্চুয়াল সম্মেলন 'লিডারস সামিট অন ক্লাইমেট' হতে চলেছে আগামী ২২ থেকে ২৩ এপ্রিল। এই সম্মেলনে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশকে। জলবায়ু সংকট নিরসনে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সমর্থনের দিকটি বিবেচনায় রেখেই আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশের জলবায়ু সংকট ও দাবিদাওয়াগুলো তুলে ধরা হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাস ভবনে ইউএনবি প্রতিনিধিকে বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলদেশের প্রতি বেশ আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে থাকা উচিৎ এমন বিষয়গুলে তারা আমাদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছে।’
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রশংসা করে আমেরিক। জলবায়ু সংকটের ঝুঁকির মধ্যে থাকা বাংলাদেশের সফল নেতৃত্ব প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আসন্ন সম্মেলনে তাকে সম্মাননা জানানো হবে।
জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সারা বিশ্বের ৪০ জন রাষ্ট্রপ্রধানকে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ''লিডারস সামিট অন ক্লাইমেট'-এ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় উন্নয়শীল অর্থনীতির দেশগুলোকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহায়তার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ। তহবিল ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সংকট প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য ৫০ শতাংশ হারে বরাদ্দ থাকা উচিত বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে জন কেরি ঢাকায়
জলবায়ু সংকট প্রশমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের পক্ষ থেকে আব্দুল মোমেন বলেন, সকল দেশকেই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু সংকট নিরসনে নিজ দেশের পদক্ষেপসমূহ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। তিনি ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশ (এনডিসি) বা জলবায়ু সংকট প্রশমনে দেশগুলোর নীতিগত ভূমিকা রাখার ব্যাপারে জোর দেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা এবং এনিডিসির বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিষয়গুলো সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে উঠে আসবে বলে আশা করা যায়।’
এর আগে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীল একটি এনডিসি প্ল্যান জমা দেয়।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্ব প্রদানকারী বাংলাদেশের জন্য এনডিসিকে একটি বড় ইস্যু হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রতিটি দেশ নিজেদের এনডিসি প্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুক এমনটাই চায় বাংলাদেশ। ড. মোমেন মনে করেন, প্যারিস চুক্তিই হতে পারে জলবায়ু সংকট নিরসনে মুক্তির পথ।
যদিও বাংলাদেশ জলবায়ু জনিত ক্ষয়ক্ষতি যেমন, নদীভাঙনের ফলে মানুষের বসতবাড়ি হারানো, সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূল এলাকাগুলোতে লবণাক্ত বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো তুলে ধরলেও, এবারের সম্মেলনে এ বিষয়গুলো আলোচনার সম্ভাবনা কম।
বাংলাদেশ মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে, উন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির ঢাকা সফরের সময় এসকল বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
সফরে জন কেরি বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. আব্দুল মোমেন জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ব্যাপারে আগ্রহী। এসময় জন কেরির কাছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে মার্কিন বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলে তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়াও দু’পক্ষের আলোচনায় নদী তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা, দক্ষিণাঞ্চলে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনায় বিশেষ দূত জন কেরি জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, এই সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জলবায়ু সম্মেলনে যোগদানের জন্য অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইন এবং তুরেস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তায়েপ এরদোগানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।