রাজধানী ঢাকায় এডিস মশার ঘনত্ব আগের বছরের তুলনায় বেশি। আসন্ন বর্ষাকালে যা আরও বাড়তে পারে, ফলে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে পারে।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) এর গবেষকরা আশঙ্কা করেছেন, রাজধানীতে বৃষ্টির পরে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের হার উদ্বেগজনক পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে দেশে ১০৫ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই রাজধানী ঢাকার নাগরিক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস ট্রান্সমিশন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক এক জরিপে ভয়াবহ পরিস্থিতির তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি সাইটে ১০ দিনের তথ্য নিয়ে এই কীটতত্ত্ব জরিপটি পরিচালিত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুসারে, জরিপ করতে ২১ সদস্যের একটি দল সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রায় তিন হাজার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এতে ১৫০টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা মোট সংখ্যার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস ট্রান্সমিশন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের আরেকটি দলও ঢাকায় বসবাসকারী মশার প্রজাতির সংখ্যা এবং অন্যান্য জীবাণু শনাক্ত করতে মশা ধরতে কাজ করছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকায় মারাত্মক পোকামাকড়ের অঞ্চল ভিত্তিক ঘনত্ব জানতে ইন্সটিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) গবেষণা পরিচালনার পর মশার ঘনত্ব দ্বারা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ম্যাপিং সম্পন্ন করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়েছে যে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনকে এখনই মশা নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের জন্য মশার আতঙ্ক রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা উচিত।
এতে আরও বলা হয়েছে, নগরবাসীকেও এই অভিযানে সম্পৃক্ত করা উচিত।
আরও পড়ুন: মশা নিয়ে বিড়ম্বনায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, কুড়িল, মিরপুর, আগারগাঁও, শ্যামলী, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, ধানমন্ডিসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকা মশার উৎপাতের কেন্দ্রস্থল।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা এলাকায় সারা বছরই মশা থাকলেও সিটি করপোরেশন খুব কমই লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড স্প্রে করে।
তিনি বলেন, ‘মশার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা সন্ধ্যায় ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না। আমরা মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে মশারি এবং কয়েল ব্যবহার করি।’
মিরপুরের বাসিন্দা মাইনুল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে কীটনাশক স্প্রে করে, যা মশার বংশবৃদ্ধি রোধে পর্যাপ্ত নয়। সিটি করপোরেশনের উচিত এ বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।