জনগণকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে এই সরকারের মেয়েদেই রাজধানীর প্রতিটি খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ইউএনবিকে মন্ত্রী বলেন, ‘খাল দখলকারীরা যত বড় ক্ষমতাশালী হোক না কেন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, খাল উদ্ধারে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরে যত খাল আছে তাতে একটি হাতিরঝিল নয়, এ রকম কয়েকটি হাতিরঝিল নির্মাণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, রাজধানীর প্রতিটি খালের দুইপাড়ে বাঁধ দিয়ে ওয়াকওয়ে ( হাঁটার পথ ) নির্মাণ করা হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা খালগুলোও খুব শিগগিরই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে, খাল দখল করে তার ওপরে বিল্ডিং বানানো হয়েছে। যারা এসব করেছে তারা যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা শহরের খালসমূহ উদ্ধার করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে নিয়েছে। ইতোমধ্যে খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, কল্যাণপুরে খালের ১৭৩ একর জমির মধ্যে ১৭০ একর জমি অবৈধ দখলে। কল্যাণপুরসহ সকল খাল শিগগিরই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
পড়ুন: চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় অবৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ
ঢাকার খালের প্রকৃত সংখ্যা:
ঢাকা মহানগরী এলাকায় ৫০টি খালের একটি তালিকা রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে।
বাইশটেকী খাল: মিরপুরের উত্তর সেনপাড়ার পর্বতা মৌজায় ৬০ ফুট দৈর্ঘে্যর বাইশটেকী খাল অবৈধ দখল ও ভরাট হয়ে ৩০ ফুট হারিয়ে গেছে।
কল্যাণপুর খাল: পাইকপাড়া মৌজার এই খালটি অবস্থিত। সিটি জরিপ অনুযায়ী খালটির পরিমাণ রয়েছে এক দশমিক শূন্য পাঁচ একর। তবে দখল-দূষণে বিলীনের পথে খালটি। এটি কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়ার মাঝামাঝি দিয়ে কল্যাণপুর থেকে দারুসসালাম এলাকার গৈদারটেক হয়ে বেড়িবাঁধের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটি বগারমার খাল নামে পরিচিত। দখলের কারণে বর্তমানে এটি নালায় পরিণত হয়েছে। খালটির ৬০ ফুট হলেও বাস্তবে ৩ ফুটেরও কম প্রশস্ত রয়েছে।
কল্যাণপুর মেইন খাল: পাইনপাড়া ও বড়-ছোট সায়েক মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। সিটি জরিপে খালটির জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে তিন দশমিক ৪৬ একর। কল্যাণপুর পাম্প স্টেশন হতে শুরু করে কাফরুলের একাংশ পর্যন্ত তিন দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি। এই কল্যাণপুর খালের একাধিক শাখা খাল রয়েছে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি শাখা তালতলা (রোকেয়া সরণি) থেকে মূল খালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া দুই দশমিক ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অপর একটি শাখা পীরেরবাগ থেকে মূল খালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ অন্য শাখাগুলো মূল খাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে, মিরপুর মাজার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে।
পড়ুন: একটি দুষ্ট চক্র দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
রূপনগর খাল (আরামবাগ): দুয়ারীপাড়া মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। সিটি জরিপের এই খালের জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৯ একর। রূপনগর খালটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে রূপনগর খাল (আরামবাগ খাল) এবং রূপনগর খাল (নিম্ন অংশ) নামে পরিচিত। মোহাম্মদপুর সার্কেলাধীন রূপনগর খালের নিম্নঅংশে দুয়ারীপাড়া মৌজার মহানগর ৭০১ নং দাগে প্রায় ৩০-৪০ ফুট প্রস্থ এবং ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্য এই খালের।
সাংবাদিক খাল: এটি প্যারিশ খাল হিসেবে পরিচিত। মিরপুরের উত্তর সেনপাড়া পর্বতা মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ।
দ্বিগুণ খাল: মিরপুরের দ্বিগুণ গড়ান চটবাড়ী মৌজায় খালটি অবস্থিত। খালটি গড়ান চটবাড়ি পাম্প স্টেশন থেকে শুরু হয়ে বাউনিয়া খালের মিলিত হয়েছে। খালের দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। খালের বেশিরভাগ অংশই ভরাট হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। আরএস জরিপে খালের জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ছয় দশমিক ১০ একর।
কল্যাণপুর আংশিক খাল: মিরপুর মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। আরএস জরিপে খালের জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৫১৫৩ নং দাগে শূন্য দশমিক ৩০ একর, ৫১৫১ নং দাগে এক দশমিক ২৩ একর, ৫০৯৩ নং দাগে এক দশমিক ৯৩ একর, ৪১৬৩ নং দাগে শূন্য দশমিক ৫১ একর।
পড়ুন: নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর চেয়েও বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী