ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের চরাঞ্চলে সরকারি খালে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এর ফলে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সরকারি বনায়নের গাছগুলো।
এদিকে সরকারি বনায়ন রক্ষায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
জানা যায়, উপজেলা পদ্মা নদীর চর হরিরামপুর ইউনিয়নের চর শালেপুর চরাঞ্চলে ১০৮ একর জমির ওপর সরকারি বনায়ন করেছে বন বিভাগ। বনায়ন সংলগ্ন একটি খালের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গত একমাস যাবৎ দিনরাত বালু উত্তোলন করছেন ওই চরের বাসিন্দা প্রভাবশালী ফেরদৌস খান (৪৮)।
বনায়ন সংলগ্ন এলাকায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর কড়াল স্রোতে উপজেলার বৃহৎ সরকারি বনায়নটি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন যাবৎ ওই প্রভাবশালী সরকারি বনায়ন ঘেষে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে রমরমা বাণিজ্য করলেও স্থানীয়রা তার ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না।
উপজেলা বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে উপজেলার চরশালেপুর মৌজায় ১০৮ একর খাস জমির উপর বৃহৎ সামাজিক বনায়নটি গড়ে ওঠে। উক্ত বাগানে মোট ৯০ হাজার বনজ বৃক্ষ রোপন করা হয়। এসব বৃক্ষের মধ্যে আকাশ মনি, শিশু গাছ, রেন্ডি কড়াই ও বাবলা বৃক্ষ রয়েছে।
গত ১৫ বছরে চরাঞ্চলের উর্বর ভূমিতে বেশিরভাগ বনজ বৃক্ষগুলো ভারী হয়ে ওঠেছে। কিন্তু পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে বনায়নটি গড়ার ফলে প্রতি বছর স্থানীয় জেলেরা এবং গৃহস্থ্যরা উক্ত বনায়নের ডালপালা কেটে উজার করলেও কেউ তদারকি করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ওই চরের প্রভাবশালী ফেরদৌস খান বনায়ন ঘেষে খালের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বনায়নটি ধ্বংসের পাঁয়তারায় মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ করে এলাকাবাসী।
চরের বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, 'চরাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গা জমি ওই ড্রেজার মালিকের দখলে। ফেরদৌস খানের এসকল অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে আমরা আর এই চরে বসবাস করতে পারব না। তাই সকলেই মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরাঞ্চলের এক বাসিন্দা বলেন, ওই প্রভাবশালী চরের সরকারি জমি দখল করে রেখেছে। আমরা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করি না। এর আগে এক ব্যাক্তি প্রতিবাদ করায় তাকে মারপিট করেছিল প্রভাবশালী ফেরদৌস খান। এ কারণে এখন আর কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলে না।
তিনি বলেন, যেভাবে সরকারি বনায়নের পাশে খালের মধ্যে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে বনায়নের অনেকাংশই ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যাবে। বন বিভাগের লোকজন এখানে না আসায় আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ফেরদৌস খান।
এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক ফেরদৌস খান বলেন, ‘সরকারি বনায়ন ঘেষে খালের মধ্যে আমাদের নিজস্ব জায়গায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু মাটির ব্যবসা করছি, তাতে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা না।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ বনায়নটি পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ ভূমিতে গড়ে উঠার কারণে উপজেলার সামাজিক বনায়ন বিভাগের কেউ সেটি তদারকি করতে যান না। ফলে ওই এলাকার প্রভাবশালীরা উন্মুক্ত সামাজিক বনায়নটি নিজেদের প্রয়োজনে উজার করে চলেছেন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, সরকারি বনায়ন ঘেষে খালের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে সেখানে আমি কি করব?
তিনি বলেন, 'ওই সরকারি বনায়নে আমি একবার গিয়েছিলাম। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় আর যাওয়া হয়নি।'