সুন্দরবনে গত ২১ বছরে ৪০টি বাঘ মারা গেছে। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে পূর্ব বন বিভাগের বাগেরহাটের দুবলারচরের কাছে রুপার খাল থেকে একটি মৃত বাঘ উদ্ধার করা হয়েছে। বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে বলে ধারণা করছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বন বিভাগের সদস্যরা শুক্রবার সকালে টহল দেয়ার সময় বনের রূপার খালে মৃত অবস্থায় একটি বাঘ ভাসতে দেখে। পরে তারা গিয়ে মৃত বাঘটি উদ্ধার করে। বাঘটির আনুমানিক বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর এবং বাঘটি পুরুষ প্রজাতির। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
ডিএফও আরও জানান, বন বিভাগের সদস্যরা বাঘটিকে তীরে উঠানোর পর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে বাঘের শরীরের কোথাও কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই। ধরাণা করা হচ্ছে, বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে।
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ থেকে ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনে নানাভাবে ৪০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২৪টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে মৃত বাঘ উদ্ধার
কখনও শিকারির হাতে কিংবা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে বের হলে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যায় বাঘ। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণেও বাঘ মারা গেছে।
এ সময়ে ২০টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তবে এখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কত তা বলতে পারেনি বন বিভাগ। বাঘ রক্ষায় নানামুখী উদ্যোগ নেয়ায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে- এমনটাই প্রত্যাশা বন বিভাগের।
বাঘ রক্ষায় উদ্যোগ
ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বাঘ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুন্দরবনে বাঘসহ বন্যপ্রাণির আবাসস্থল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোট ছয় লাখ এক হাজার ৭০০ হেক্টর বনের মধ্যে এখন তিন লাখ ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর অভয়ারণ্য এলাকা। আগে ছিল মাত্র এক লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর।
২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভায়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে। সুন্দরবনে বাঘের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল ফাঁড়ির কার্যক্রমের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল করা হচ্ছে সুন্দরনে। এছাড়া বনের সীমান্ত এলাকায় বন বিভাগের টহল বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক বন বিভাগ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে ডিএফও জানান।
জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রতিটি বাঘ তাদের আবাসস্থলের জন্য ১৪ থেকে ১৬ বর্গ কিলোমিটার (হোমরেঞ্জ) চিহ্নিত করে সেখানে বাস করে। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ।
আরও পড়ুন: মতলবে খাঁচায় বন্দি মেছো বাঘ, জনমনে আতঙ্ক
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে লবণাক্ততা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করছে বাঘ।
নদী-খাল ভরাট হওয়ার কারণে বাঘ মাঝে মধ্যে সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বন সংলগ্ন গ্রামে ঢুকে পড়লে গ্রামবাসীর হাতে মাঝে মধ্যে বাঘের প্রাণহানি ঘটে। আর সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের তৎপরতা একেবারে বন্ধ করাও সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন সূত্র মতে, বাঘের আট উপ-প্রজাতির তিনটি ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র ১২টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বের বন উজাড়, শিকারি ও পাচারকারীদের কারণে বাঘ ‘বিপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।