প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ঘর ও জমি পেয়ে জমির উদ্দীন এখন নিজেই স্বাবলম্বী। নিজের বসবাসের ঘরটি এলাকার অন্য দরিদ্র অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করে প্রশাংসায় ভাসছেন তিনি।
জমির উদ্দিন বিশ্বাস (২৮), চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের মৃত খেদের বকসোর ছেলে। এক মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে সংসার তাঁর।
গত বছরের ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৮টি ঘর উদ্বোধন করেন। সেই থেকে ভূমিহীন দিনমজুর জমির উদ্দিন আন্দুলবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপহারকৃত বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন। তখন থেকে তার আয় বাড়ায় তিনি এখন স্বাবলম্বী।
আরও পড়ুন: ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০ হাজার ঘর নির্মাণ হচ্ছে
তাই জমির উদ্দিন বিশ্বাস সম্প্রতি সস্ত্রীক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার বসত ঘর ও জমির দলিল জমা দেন এবং অন্য কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে এই ঘর দেয়ার অনুরোধ জানান। এই ঘরটি অন্য কোনো গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
জমির উদ্দিন বিশ্বাস পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। সারা দিনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোনো রকমে চলছিল সংসার। তবে ভূমিহীন হওয়ায় ঠাঁই হয়েছিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া শাহাপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এতে কিছুটা আর্থিক কষ্ট লাঘব হলেও স্বাচ্ছন্দ্য আসছিল না। তবে এবার মাথা গোজার ঠাঁই হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে কলা ক্রয় করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করে প্রতিদিন আয় করছেন ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা। এতে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ফলে পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভালোই আছেন তিনি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জমির উদ্দিন বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা খাতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার বসত-ঘর ও জমির দলিল জমা দেন।
তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী (অফিসার ইউএনও) আরিফুল ইসলাম রাসেল, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবির, আন্দুলবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তারসহ জমির উদ্দিনের বাড়িতে হাজির হন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমার তো এখন নিজের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। সমাজে আমি ছাড়া এখনও অনেক দরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তি আছে, এই ঘরটা আমি তাদের দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই আমি স্বাবলম্বী হয়ে জমি ও ঘর তৈরি করে ফেলেছি। এখন এই ঘর ও জমি আমার আর প্রয়োজন নেই। তাই আমি চাই, এই ঘরটা অন্য কোনো দরিদ্র মানুষ পাক।’
আরও পড়ুন: হুমকির মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্প, গাইবান্ধায় ২১ গ্রাম প্লাবিত
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যান্য বাসিন্দারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্রয়স্থল দিয়েছেন। আগে আমাদের খুব খারাপ দিন গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা হয়েছে, সেই সঙ্গে সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য আয়ের সুযোগও হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি স্বপ্ন, দেশে যাতে কেউ গৃহহীন না থাকে, সে জন্য তিনি ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিদের জমি এবং ঘর দিয়েছেন। সে ধারাবাহিকতায় জীবননগর উপজেলার শাহপুর গ্রামের দিনমজুর জমির উদ্দিনকে একটি ঘর দেয়া হয়েছিল। সেই ঘরে বসবাস করে নিজে পরিশ্রম করে আজ তিনি স্বাবলম্বী। এ জন্য তিনি নিজ নামে অন্য স্থানে জমি কিনে ঘর করে বসবাস করায় নিজে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি ও ঘর হস্তান্তর করেন। এবং অন্য দরিদ্র ব্যক্তিকে দেয়ার জন্য বলেন। তাঁর এই মহতী উদ্যোগের জন্য জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই।’
উল্লেখ্য, জীবননগর আন্দলবাড়িয়ার শাহাপুরে ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একটি আদর্শ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া ঘর পান ভূমিহীনরা।