চোখের সামনেই মেঘনা নদীতে ভেঙে পড়ল জেলার রামগতি উপজেলার চর বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এভাবে ৩০ বছরে মেঘনায় ভয়াবহ ভাঙনে লক্ষ্মীপুরেরর রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়েছে। শেষ ১০ বছরেই বিলীন হয়েছে ১৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা।
স্থানীয় এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নথিপত্র পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্ট জনদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ সোমবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি স্কুল ভবন। এটি রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নে অবস্থিত চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয়। নতুন ভবনটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্মাণ করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
লক্ষ্মীপুর উপকূলের মেঘনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষ্য, মেঘনার ভাঙনের ভয়াবহতা বিগত সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি। গত ১০ বছরে লক্ষাধিক মানুষ মেঘনায় ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে।
সর্বশেষ গত দুই বছর ধরে মেঘনার ভাঙন ছাড়াও লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে। চলতি বছরে নতুন সমস্যা যোগ হয়েছে জোয়ারের পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙনকবলিত মেঘনাপাড় এলাকায় স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর এবং কমলনগর উপজেলার পশ্চিম সীমানার উত্তর-দক্ষিণ এবং রামগতি উপজেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ বরাবর মেঘনা নদী বহমান। কমলনগর উপজেলায় মেঘনার দৈর্ঘ্য ১৭ এবং রামগতিতে ২০ কিলোমিটার। দুই উপজেলার ৩৭ কিলোমিটার মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রতিনিয়ত চলছে ভাঙন।
আরও পড়ুন: কয়রায় নদীভাঙন: ১১ বছরে বাড়ি ছেড়েছে ১৬ হাজার পরিবার
১৯৯১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে সাবেক রামগতি (রামগতি-কমলনগর) উপজেলার আয়তনছিল ৬৬৩ বর্গ কিলোমিটার। ২০ বছর পর ২০১১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে সে আয়তন উল্লেখ করা হয় ৫৯৪ বর্গ কিলোমিটার। যাতে দেখা যায় ২০ বছরে মেঘনায় বিলীন হয়ে যায় ৬৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ২০১১ সালের পর আর কোনো আদমশুমারি হয়নি।
এর মধ্যে এ অঞ্চলে নদী ভাঙনের গতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভাঙনকবলিত ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, ভাঙনের তীব্রতায় গত ৫ বছরে বিলীন হয়েছে কমলনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১৫টি ওয়ার্ড।
সর্বশেষ কী কারণে মেঘনায় এত ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে স্থানীয়ভাবে কেউ তা জানাতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামগতি ও কমলনগরের কিছু এলাকায় আগে মাটির বেড়িবাঁধ ছিল। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বাঁধের ৩৭ কিলোমিটার মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর সেইবাঁধ আর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যাপক হারে নদীর তীর ভাঙছে।