এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও প্রভাব সম্পর্কে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি। যেমন সুস্থ হবার পরেও অনেকে আবার কেন কোভিড-১৯ রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন, সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে করোনাভাইরাস থেকে আরোগ্য লাভ করা ৯১ জনের শরীরে আবারও পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ বলে জানা গেছে।
কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেসিডিসি) এই তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরও তাদের শরীরে ভাইরাসটি ‘পুনরায় সক্রিয়’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষকদের মতে, করোনাভাইরাসে একবার আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষদের ১৪ শতাংশের ক্ষেত্রে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটা ঠিক দ্বিতীয় সংক্রমণ নয়, বরং ভাইরাসটি শরীরের কোথাও লুকিয়ে ছিল এবং তা আবার ফিরে আসছে। একবার সংক্রমণ হলে মানুষের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু কিছু লোকের ক্ষেত্রে তা ঘটে না।
তবে করোনাভাইরাস যে এতো তাড়াতাড়ি তার লুকানো অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে আবার আঘাত হানতে পারে, এটাই গবেষকদের বিস্মিত করছে।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার রুশনি ফাতিমা মুক্তি ইউএনবিকে বলেন, ‘যেকোনো ভাইরাস তার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। নভেল করোনভাইরাসটি বারবার এর প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। একবার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন কারও শরীরে এটি পুনরায় সক্রিয় হলেও ঝুঁকি রয়েছে।’
নভেল কোরোনাভাইরাস, সার্ভ-সিওভি ২ বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা জ্বর, ক্লান্তিবোধ, শুকনা কাশি এবং কখনও কখনও বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে প্রায় সাত দিন অসুস্থ থাকতে পারেন। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৮০ শতাংশ কোনো বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াই এই রোগ থেকে সেরে উঠেছেন।
তবে কোভিড-১৯ রোগটি বয়স্ক এবং হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
কোনো ব্যক্তি একবার করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার শরীর রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি উৎপাদন করা শুরু করে। এই অ্যান্টিবডিগুলো ভাইরাসটি সফলভাবে প্রতিরোধ করা শুরু করে। এতে উপসর্গগুলো সাধারণত কমতে শুরু করে এবং রোগী আরও ভালো অনুভব করে।
এক সময় প্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবডির সাহায্যে ভাইরাসটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। চিকিৎকদের মতে, রোগের উপসর্গ কমে যাওয়ার পরেও, ভাইরাস সামান্য পরিমাণে রোগীর শরীরে থাকতে পারে। এজন্য ভাইরাসটি যাতে অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে সুস্থ হলেও রোগীকে আরও তিন দিন আলাদা থাকতে হবে।
দ্য ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এসব ছাড়াও গাইডলাইন সরবরাহ করেছে যে একজন ব্যক্তির কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পর মোট দুবার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলাফল আসতে হবে। যদি লক্ষণ এবং পরীক্ষার উভয় শর্ত পূরণ হয় তবে কেবলমাত্র একজন ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসমুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি এবং ইনফেকশাস ডিজিজের প্রধান ডা. অ্যান্থনি ফৌসি গত সপ্তাহে এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে এই গবেষণাটি করিনি। তবে আমি সত্যিই আত্মবিশ্বাসী যে যদি এই ভাইরাসটি আমাদের পরিচিত অন্যান্য ভাইরাসগুলোর মতো কাজ করে তবে, আপনি একবার আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরায় সংক্রমণ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।’
তবে নভেল করোনাভাইরাস পুনরায় সংক্রমণের প্রভাব বোঝার জন্য আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। সিডিসি’র বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে- অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা।
আরও পড়ুন: কাতারে করোনায় ৫ শতাধিক বাংলাদেশি আক্রান্ত, মৃত্যু ৩