জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর শাহজাহান শিশির অনেক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। গাছেরও প্রাণ আছে তাই গাছে পেরেক দিয়ে লাগানো সাইনবোর্ড তুলে ফেলা। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশে পাঁচ হাজার তাল গাছের বীজ ও চারা রোপণ, কিংবা ধানের ন্যায্যমূল্য কৃষকের হাতে তুলে দিতে নিজেই গাড়িতে মাইক বেঁধে প্রচারণায় নেমে পড়ার মতো কাজ করে সকল মহলে ইতোমধ্যেই বেশ প্রশংসিত হয়েছেন।
আগামী অর্থবছরে কচুয়ার বিভিন্ন ফসলি মাঠে কাজ করা ক্লান্ত কৃষকের জন্য দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার স্থাপনের কথা। তবে এরই মধ্যে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, কচুয়া উপজেলার ৯ নং কড়ইয়া ইউনিয়নের মোঃ মানিক মিয়া- ওয়ার্ড মেম্বারের (৩ নং ওয়ার্ড) মাধ্যমে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে এমনই এক দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার তৈরি করেছেন।
যেখানে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি পান করার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট। এখানে কাজের ফাঁকে ক্লান্ত কৃষক/ কৃষাণী একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। আর দূরে যাদের বাড়ি, তারা মাঠেই দুপুরের খাবার খেতে পারেন এবং বিশ্রামাগারে থাকা টিউবওয়েলের পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাতে পারেন।
আলাপকালে তিনি জানান, আগামী অর্থবছরে উপজেলার বাকি ১১টি ইউপিতে ১১টি অনুরূপ বিশ্রামাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান,‘করইয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে দুইশত একর চাষযোগ্য জমির মাঝখানে স্থানীয় কৃষক ভাইদের জন্য এই বিশ্রামাগারটি তৈরি করেছেন। উপজেলা পরিষদের ফান্ড থেকে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা।
এখানে কৃষক নুর মোহাম্মদ, মমিন, আবু মোল্লা, কাউছার মিজিসহ কয়েকজনকে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। তারা এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
তারা বলেন, ‘এডা (এটা) ভালো উদ্যোগ, কুব (খুব) ভালো। চেয়ারম্যানরে আল্লাহয় বাঁচাক। আমাগো লেইগা (জন্য) চিন্তা করে।’
এখানে একসাথে প্রায় বিশ জন কৃষক বসতে পারছে। সাথে একটি টয়লেটের ব্যবস্থা আছে, পানির জন্য একটি নলকূপও বসিয়েছেন। কৃষকদের দীর্ঘপথ যেন পাড়ি দিতে না হয় তার জন্য একটি রাস্তাও করেছে। রাস্তার দুপাশে প্রচুর তালের আটি রোপন করেছেন, যেন বর্ষায় বজ্রপাত থেকে বাঁচতে তাল গাছের নিচে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে পথিক, কৃষক-কৃষাণী বসতে পারবে।
শাহজাহান শিশির কিছুদিন আগেই পরিবেশ বাঁচাতে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার কমানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়েছেন আরও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
সবাইকে জানিয়ে দেন পুরনো প্লাস্টিক-পলিথিন উপজেলা পরিষদে জমা দিলেই দেয়া হয়ে পুরস্কার।
অন্তত দশ কেজিতে একটি হারমোনিয়াম, একটি ফুটবলের জন্য এক কেজি পলিথিন বা বোতল। আর একসেট ক্রিকেট সরঞ্জাম পেতে হলে জমা দিতে হবে পাঁচ কেজি পুরনো পলিথিন বা পুরোনো বোতল। ইতোমধ্যে এ উদ্যোগের অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, প্রচুর পুরনো বোতল পেয়েছি। রিসাইক্লিং ব্যবসায়ীদের কাছ এসব পুরনো বোতল বিক্রি করেছি ৩ হাজার ৮০০ টাকা। গ্রামের লোকজন এক টনের মতো পলিথিন জমা দিয়েছে ।
উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে বরাবরই সাধুবাদ জানিয়েছে কচুয়া উপজেলাবাসী। নতুন এই উদ্যোগকেও সাদরে গ্রহণ করেছে তারা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও ফসলী মাঠের মাঝখানে কৃষকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের এমন উদ্যোগ জেলায় তথা সারা দেশে নেয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে শাহজাহান শিশির কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তার পাশের খালি জায়গায় ৬২ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলজ ও বনজ বৃক্ষের চারা একযোগে রোপণ করে সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছেন।