দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। স্থানীয়রা জানান, সারাদিন কাজ শেষে রাতে বাড়িতে ফিরে শান্তি পাচ্ছে না কেউই। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে লোডশেডিং। তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে খুলনার মানুষের।
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সংস্থাটির সদর দপ্তর খুলনায়।
ওজোপাডিকোর লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে জানা গেছে, শনিবার পিক আওয়ারে ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৮০ মেগাওয়াট, সরবরাহ ছিল ৬১৫ মেগাওয়াট, অর্থাৎ লোডশেডিং ছিল ৬৫ মেগাওয়াট। রবিবার বিকাল ৩টায় ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৬৯ মেগাওয়াট, সরবরাহ ছিল ৬০৬ মেগাওয়াট, অর্থাৎ লোডশেডিং ছিল ৬৩ মেগাওয়াট। রবিবার রাতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিলো অন্যান্য দিনের চাইতে বেশি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত এক মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ে আবাসিক এলাকার ১০টি ফিডারে প্রায় এক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়। সেই হিসেবে গত দুই রাতে নগরীর অধিকাংশ এলাকাতেই কয়েক দফায় লোডশেডিং ছিলো।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে লোডশেডিং: সরকারের পক্ষে অবস্থান পাক জ্বালানি মন্ত্রীর
ওজোপাডিকোর তথ্যের মিল পাওয়া গেছে সামাজিক মাধ্যমে। রবিবার রাতভর ফেসবুক জুড়ে ছিল বিদ্যুৎহীনতার হাহাকার। তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কষ্ট তীব্র ক্ষোভ হিসেবে ভেসে ওঠে মুঠোফোনের পর্দায়।
আল আমিন তালুকদার প্রিন্স নামে একজন লিখেছেন, রাত ৩টা বাজে। আশেপাশে শুধু শিশুদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। সংবাদ কর্মী বশির হোসেন লিখেছেন, সন্ধ্যা থেকে পাঁচবার লোডশেডিং। এক ঘণ্টার পর এসে পাঁচ মিনিটও থাকল না। মাফ করো আল্লাহ।
সাংবাদিক রাশিদুল ইসলাম লিখেছেন, মধ্য রাতেও বিদ্যুৎবিহীন দেশ।
নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরমান হোসেন জানান, সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চারবার বিদ্যুৎ গিয়েছে।
ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদেরকে কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে তারা লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে খুলনায় ২৩ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার (১৬ এপ্রিল) খুলনায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। প্রচণ্ড রোদে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছেন।
খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। রবিবার (১৬ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন এই দুই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর খুলনায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বাগেরহাটের মোংলায় ৪১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
নগরীর বাগমারা এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক সিদ্দিক মোল্লা বলেন, রোদে মনে হচ্ছে চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। অসহ্য গরম। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি এ জন্য তাই নামতে হচ্ছে। তবে গরমের কারণে সেই অনুযায়ী যাত্রী নেই। দুপুরে রোদের তাপ অনেক বেশি থাকে, তখন ছায়া জায়গায় বিশ্রাম নেই। আজকে অন্যান্য দিনের চেয়ে গরম অনেক বেশি।
খালিশপুর নয়াবাটি এলাকার বাসিন্দা রাশিদুল ইসলাম বলেন, এই মাসে গরম বেড়েছে। রমযানের শুরুতে এমন গরম ছিল না। গরমের কারণে রাস্তায় বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর ঘরে গেলে বিদ্যুৎ থাকছে না। শুধু দিনে নয়, মধ্যরাতেও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এই গরমে ঘন ঘন বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
ফুলতলা উপজেলার দামুদর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, অসহনীয় গরম, সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ কিছুটা কমবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন বৃষ্টি হয়।
এদিকে গরমে বেড়েছে হাতপাখার কদর। বিভিন্ন দোকানে হাতপাখা কিনতে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। নগরীর হাউজিং বাজারের দোকানি মুসলিমা বেগম বলেন, গত কয়েকদিন গরম বেশি থাকায় হাতপাখার বিক্রি বেড়েছে। প্রতিপিছ হাতপাখা ৩০ টাকায় বিক্রি করছি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সবুজ আহমেদ বলেন, প্রচণ্ড গরম। গরমের সঙ্গে বিদ্যুৎও থাকছে না। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গরমে একটু প্রশান্তির জন্য আজ ৯০ টাকা দিয়ে তিনটি হাতপাখা কিনেছি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, খুলনা বিভাগে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। রবিবার খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আরও দুই থেকে তিনদিন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর খুলনায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়ে ভুগছে ঢাকা, মোমবাতি কারিগরদের মুখে হাসি