ভারতে উচ্চ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) কর্তৃক তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকার ডোজ চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ঢাকা।
পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকেও টিকা আনার বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘ভারত আমাদের জানিয়েছে যে এটি (মার্চের চালান) আসবে তবে এখনও আসেনি। আমরা তাদের আশ্বাসে বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ভারতের উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ৩২ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে তবে ভারত থেকে মার্চে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত ৫০ লাখ ডোজের চালান এখনও আসেনি।
সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কিনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান গত জানুয়ারিতে দেশে এসেছে এবং ২০ লাখ ডোজের দ্বিতীয় চালানটি ফেব্রুয়ারিতে আসে।
রপ্তানি বন্ধে ভারতের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার দাবিসহ বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের উচ্চ চাহিদার কথা স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমি মনে করি যে আমাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং অগ্রিম অর্থ প্রদান করার কারণে এটি আমাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। ভারত আশ্বাস দিয়েছে যে সময় মতো ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে এবং আমরা এটি বিশ্বাস করি।’
আরও পড়ুন: ভারতে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড আড়াই লাখের বেশি করোনা শনাক্ত
গত মাসে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময়, দু'দেশ চলমান কোভিড-১৯ এর পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন এবং চলমান সংকট চলাকালীন দু'দেশের মধ্যে টিকার সরবরাহ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ পক্ষে ভারতের তৈরি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দেয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান সরবরাহের প্রশংসা করা হয়।
সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের ভ্যাকসিনের অবশিষ্ট চালান নিয়মিত সরবরাহের সুবিধার্থে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়।
ভারত তাদের দেশীয় কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাংলাদেশকে সর্বোত্তম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল।
ড. মোমেন বলেন, ‘তারা (ভারত) বেশি উত্পাদন করছে তবে তারা তাদের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। আমরা অন্যান্য উত্সের সাথে যোগাযোগ করছি।
তিনি বলেন, এর আগে চীন বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহে আগ্রহ দেখিয়েছিল কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) কর্তৃক তাদের ভ্যাকসিন অনুমোদিত না হওয়ায় বাংলাদেশ সে সময় আগ্রহ দেখায়নি।
ড. মোমেন বলেন, চীন তাদের বিশাল জনসংখ্যার জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে, তারা ৫০টিরও বেশি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে যেখানে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে তারা বলছে। আমরা তাদের সাথে (চীন) আবার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা আমাদের সহায়তা করতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশকে একটি সহ-উত্পাদনে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এটা খারাপ না, আমরা আমাদের বিকল্পগুলো খোলা রাখছি।’
তিনি বলেন, রাশিয়া প্রযুক্তি দেবে এবং বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকলে এখানে রাশিয়ান ভ্যাকসিন তৈরি করবে। এটি কম মূল্যের হবে এবং আশা করি এটি আরও ভালো হবে।’
রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেসমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) জানিয়েছে, রাশিয়ান স্পুটনিক ভি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবহারেরও অনুমোদন দিয়েছে ভারত।
বিশ্বব্যাপী টিকার উচ্চ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেশী ভারত প্রথমে বাংলাদেশে করোনার টিকা রপ্তানি করতে সম্মত হয়।
ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এবং দূরদর্শিতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি প্রথম থেকেই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে টানা তৃতীয় দিনের মতো শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি এই ভাইরাসে আরও ১০২ জন মারা গেছেন।
এর আগে শুক্রবার ও শনিবার ১০১ জন করে মৃত্যুর কথা জানায় অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৮৫ জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে ৩ হাজার ৬৯৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জনে। নতুন সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ১২১ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন।