স্বচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা এক দম্পতির মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে পাবলিক টয়লেটে। সেখানেই তাদের সংসার।
ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী পৌর সদরের একটি পাবলিক টয়লেটে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন ভূমিহীন, অসহায় পরিচ্ছন্ন কর্মী শাহাদাৎ ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগম।
আরও পড়ুন: মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের জন্য ঘর
বোয়ালমারী বাজারের টিনপট্টি এলাকায় গণশৌচাগারই এই দম্পতির ঘরবাড়ি। শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে বোনের সাথে বোয়ালমারী আসেন শাহাদাৎ। প্রথমে টোকাই হিসেবে কাগজ কুড়িয়ে, মুটের কাজ করে কখনও বা সুইপারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন তিনি।
পৌর মেয়র মোজাফফর হোসেনের বদান্যতায় একজন শহর পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে মাস্টার রোলে কাজ ও হেলিপ্যাড এলাকায় থাকার জন্য একটি ছোট্ট ছাপরা ঘর পেলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী বসবাস শুরু করেন এই গণশৌচাগারে।
আরও পড়ুন: ‘রোগ’ নেই, তবু হাসপাতালই ঠিকানা বৃদ্ধা পারভীনের!
শাহাদাৎ বলেন, আমার বাবার বাড়ি মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার পাচুড়িয়ায়। জন্মের সময় মার মৃত্যু হয় আর ৬ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে চলে আসি বোয়ালমারীতে। পৈতৃক সম্পদ বলে কিছু ছিল না। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে এবং জীবিকার তাগিদে শৈশব থেকে কাগজ কুড়িয়ে, টুকটাক কাজ করে জীবন চালিয়ে নিচ্ছি কোনোমতে, জমি ঘরবাড়ি দূরে থাক নিয়তি ভাড়া বাড়িতেও থাকার ভাগ্য লেখেনি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে একই ঘরে গরুসহ বৃদ্ধার বসবাস
তিনি আরও বলেন, আবার অনেকে সুইপারের কাজ করি বলে বাড়ি ভাড়াও দেয় না। বোয়ালমারীর পৌর মেয়র মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়া মাস্টার রোলে দৈনিক ১৬০ টাকা বেতনে বাজার ঝাড়ুদারের চাকরি দিয়েছেন এবং বোয়ালমারী হ্যালিপ্যাডে সরকারি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যদের জায়গা না হওয়ায় আমি ও আমার স্ত্রী পাবলিক টয়লেটকেই নিজেদের বাসস্থান বানিয়ে নিয়েছি। এখন বয়স হয়েছে রোগবালাইয়ের জন্য ঠিকমতো কাজও করতে পারি না।
আরও পড়ুন: পেশা মোবাইল চুরি, নেশা বিয়ে করা!
শাহাদাতের স্ত্রী নার্গিস বলেন, ‘দৈনিক বাজার ঝাড়ুর কাজ করার পর মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তাই খাই। আবার কিনেও খাবার খাই। অনেক সময় না খেয়েও দিনযাপন করি। সরকার ঘর দিচ্ছে তা আমরা জানি না, কেউ বলেও নাই। যদি সরকার আমাদেরকে একটা ঘর দিত জীবনের শেষ দিনগুলো শান্তিতে থাকতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই আসে খোঁজখবর নিয়ে যায়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। আমাদের এক শতাংশ জমিও নাই যে সেখানে একটা ঘর করে থাকব।’
আরও পড়ুন: গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ১০৫ শতক জমি দান করলেন মুক্তিযোদ্ধা মালেক
গণশৌচাগারের পাশের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, শাহাদাৎ ও নার্গিস নামে স্বামী-স্ত্রী প্রায় দুই বছর ধরে পাবলিক টয়লেটের এক কোনে বসবাস করেন।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছেন। শাহাদাৎ দম্পতির বসবাসের জন্য সরকারিভাবে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।’